ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে আজ থেকে

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৫ অক্টোবর ২০১৯

 বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে আজ থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ থেকে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গঙ্গা পদ্মা ব্যতীত দেশের সব নদীর পানিই সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টরা মধ্যে গঙ্গা পদ্মার পানি হ্রাস পেতে পারে। তারা জানায় শুক্রবার থেকে এই নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে আজ শনিবার থেকে পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুড়া, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা সমূহের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আজ থেকে উন্নতি হতে পারে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে দেশের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাত না হলে এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যা পানি নেমে যেতে পারে। মূলত উজান থেকে আসার পানির কারণে অসময়ে দেশে বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে পদ্মা অববাহিকায় অবস্থিত বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী চাঁপাইনবাগঞ্জর নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট রয়েছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে এসব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এছাড়া শেষ সময়ের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফরিদপুর পাবনাসহ অনেক এলাকায় শীতকালীন ফসল তলিয়ে গেছে। ধান ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে অনেক। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিপাত অব্যাহ রয়েছেন। যদিও সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ কমছে। কিন্তু ভাটির দেশ হিসেবে পদ্মা অববাহিকতা ধরে পানি নেমে এসে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। তবে পানি কমার আভাস দিলেও পদ্মা নদীর পানি এখনও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ির গোয়ালন্দের কাছে এই নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়ার পদ্মা নদীর প্রধান শাখা গড়াই নদীর পানি কামারখালি পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর ািদয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তাদের ৯৩টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৭টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনে পানি সমতলে বাড়ছে। অপর দিকে ৬৭টি স্টেশনের পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। ৯টি স্টেশনের পানির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে মৌসুমি বায় কম সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এই বায়ু উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অসম, পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে খুলনা রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় ঢাকা ময়মনসিংহ, বরিশাল চট্টগ্রাম বিভাগের দুএক জায়গায় হাল্কা থেকে মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে এসব বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের ভেতরে বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুতই বন্যার পানি নেমে যাবে। নেমে যাওয়ার পথে নিম্নাঞ্চলে কোন কোন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়তে পারে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে বর্ষাকাল থাকে। এই সময়ের মধ্যে মৌসুমি বায়ু অধিক সক্রিয় থাকে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বর্ষা ঋতুতে। ফলে আষাঢ় শ্রাবণ প্রায়ই বৃষ্টিহীন থাকছে। এই বছরে আবহাওয়া অফিসের হিসাব বলছে, বর্ষা মৌসুমে একমাত্র জুলাই মাস ছাড়া এই মৌসুমে স্বাভাকি বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। এর বিপরীতে উষ্ণতা ছিল অনেক বেশি। এই মাসগুলোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ষড়ঋতু যে ধরন পাল্টাচ্ছে তা অসময়ে বন্যা পরিস্থিতি থেকেই তা স্পষ্ট হচ্ছে। এদিকে অসময়ের বন্যায় পদ্মার তীরবর্তী জেলা শহরগুলোর নিম্নাঞ্চল এখন পানি তলিয়ে আছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদী পানি বিপদসীমার খুব কাছাকাছি দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। জেলার চারটি উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে চার হাজার ৬৫৬ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানা গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা। দুর্ভোগে পড়েছে ১৩ হাজার পরিবার। এছাড়া প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাবনার পাকশী, সাড়া ও লক্ষীকু-া ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু এলাকার স্বজনদের বাড়িতে। পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালুয়া অংশে শিলাইদহ কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধে প্রায় ২০ মিটার ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে সেখানে বালুর বস্তা ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নে ৪৭ গ্রামের গ্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি।
×