ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একুশে পদকপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্মগুরু সত্যপ্রিয় মহাথের আর নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ৫ অক্টোবর ২০১৯

 একুশে পদকপ্রাপ্ত বৌদ্ধ ধর্মগুরু সত্যপ্রিয় মহাথের আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারের অধ্যক্ষ ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের আর নেই। সত্যপ্রিয় মহাথেরের প্রকৃত নাম বিধু ভূষণ বড়ুয়া। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়ছেন রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ ব্যক্ত করার পাশাপাশি তার বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। প্রবীণ এ বৌদ্ধধর্মীয় গুরু ২০১৫ সালে সমাজসেবায় একুশে পদক পান। সংসার ত্যাগী সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত হরকুমার বড়ুয়া ও মাতা প্রেমময়ী বড়ুয়া। রামু সীমাবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরেক বৌদ্ধ মহাপুরুষ বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাথের কাছে প্রব্রজ্যা গ্রহণ (গৃহজীবন ত্যাগ) করে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হন। এর ৬ মাস পরই পবিত্র মাঘী পূর্ণিমার দিনে তিনি উপ-সম্পদা (ভিক্ষুত্ব) গ্রহণ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫৫ সালে মায়ানমারের ধর্মদূত পালি কলেজে অগ্রমহাপন্ডিত উ. বিশুদ্ধায়ু মহাথের ও প্রজ্ঞালোক মহাথেরর কাছে পালি ভাষা ও বিনয় শিক্ষা লাভ করেন। এ মহান পুণ্যপুরুষ পৃথিবীর বহু ভাষায় পারদর্শী। বুদ্ধ ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পালি ভাষার মূল ত্রিপিটকের বিভিন্ন অধ্যায় থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন সত্যপ্রিয় মহাথের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অসাধারণ সাহসী ভূমিকা রাখেন শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের। যুদ্ধ-চলাকালীন তিনি এলাকার সহস্রাধিক অসহায় ও নির্যাতিত মানুষকে ঐতিহ্যপূর্ণ পুরাতন কাঠের সীমাবিহারে আশ্রয় দেন। এ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাক্বিতন্ডা হয় এ বৌদ্ধ ভিক্ষুর। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কক্সবাজারে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ার লাখেরায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার পর গৌতম বুদ্ধের সাম্য-মৈত্রী ও অহিংসার বাণীকে সর্বময় ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সত্যপ্রিয় মহাথেরের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনসহ বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অন্যান্য ভূমিকা পালন করছেন তিনি। বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন তিনি।
×