ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধাসহ আধুনিক কারাগার হচ্ছে নরসিংদীতে

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৫ অক্টোবর ২০১৯

 তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধাসহ আধুনিক কারাগার  হচ্ছে নরসিংদীতে

ওয়াজেদ হীরা ॥ নরসিংদী জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন কারাগার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৩২৬ কোটি টাকার প্রকল্পে নতুন কারাগারে থাকবে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক তথ্য প্রযুক্তির সন্নিবেশ। এছাড়াও থাকছে কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একক ও পারিবারিক বাসস্থান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উদ্যোগে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কারা অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতর। এটি বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কারাগারটি নির্মাণে খরচ হবে ৩২৬ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ কারাগারে থাকবে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। যার মাধ্যমে কারা বন্দীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্দীদের গতিবিধি, কারাগারের ভেতর ও বাইরে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এখন যেসব কারখানা রয়েছে সেখানে কারা রক্ষীদের জন্য তেমন আবাসন ব্যবস্থা নেই। এ কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পারিবারিক আবাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে থাকবে একক বাসস্থানেরও ব্যবস্থা। নরসিংদী জেলার নতুন এ কারাগারটি হলে বন্দী ধারণ ক্ষমতা বাড়বে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নির্দেশনাও দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বিচারিক কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব কারাগারের অভ্যন্তরে ‘ভার্চুয়াল কারাগার’ স্থাপন করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্ধর্ষ আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে টানাটানি করতে যাতে না হয় সেজন্য সব কারাগারে এ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রকল্প অনুমোদন পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যেসব আসামি ছিনতাই বা অন্য কোন কারণে জেলে রয়েছে, সেসব আসামিকে ক্যামেরার মাধ্যমে এজলাসে বসেই বিচারক যেন বিচার করতে পারেন সেজন্যই কারাগারগুলোতে ‘ভার্চুয়াল কারাগার’ বানানো দরকার। কারা অধিদফতরের উর্ধতন দু’জন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, বিচারিক কার্যক্রমের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোট’ বিষয়টি ইতোমধ্যেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে চলমান। তবে সেটি বাস্তবায়ন করছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসব করে দিচ্ছে। এছাড়াও নতুন হওয়া কারাগারেও এসব ভার্চুয়াল কোর্ট সংযুক্ত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন। কারা অধিদফতর ও জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী কারাগার প্রথম চালু হয় ১৯৮৩ সালে (মহকুমা কারাগার হিসেবে)। যা ১৯৮৮ সালে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত হয়। আশির দশকে দেশের সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অবকাঠামোর কোন পরিবর্তন ছাড়াই গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সাব জেলকে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত করা হয়। জেলা কারাগার হিসেবে ঘোষণার সময় এখানকার অনুমোদিত ধারণক্ষমতার ছিল মাত্র ২৪৪ জন। নরসিংদীকে জেলায় উন্নীত করার পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে জেলা কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে গড়ে এই কারাগারে গড়ে ৮০০-১০০০ জন বন্দী অবস্থান করে। খালি জায়গা না থাকায় বন্দীদের জন্য ব্যারাক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে কারা অধিদফতর রাজস্ব বাজেট থেকে ৬০.৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়কের পাশে ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। যেখানে নতুন কারাগার নির্মাণ হলে আটক বন্দীদের বসবাসের সুষ্ঠু পরিবেশ হবে বলে মনে করবে কারা অধিদফতর। নরসিংদী জেল সুপার মোঃ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা জেনেছি এটি একনেকে পাস হয়েছে। গেজেট হবে, পিডি নিয়োগ হবে। নতুন কারাগার নির্মাণ হলে বন্দীদের দুর্দশা কমে আসবে বলেও জানান তিনি। জেলা কারাগার সূত্র মতে, ২৪৪ জন বন্দীর মধ্যে ২৩৪ জন পুরুষ আর ১০ জন মহিলা থাকার কথা থাকলেও গত ডিসেম্বর হিসেব অনুযায়ী কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ১৩৫৫ জন। যেখানে পুরুষ ১৩২৬ ও মহিলা ২৯ জন। ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দী কারাগারে থাকছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধান যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হলো- তিন লাখ ২৪ হাজর ৭৮৯ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, পুরুষ বন্দীদের জন্য দুইটি ৬ তলা ভবনের ব্যারাক নির্মাণ; সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য একটি ছয়তলা ভবনের বন্দীশালা নির্মাণ; পুরুষ বন্দীদের জন্য একটি চারতলা ভবনের ব্যারাক ও একটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বন্দীদের জন্য একটি দুইতলা ভবনের ব্যারাক নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে কারাগারটিতে মহিলা বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ, নারী বন্দীদের জন্য একটি দুইতলা ভবনের সেল নির্মাণ, নারী শ্রেণীপ্রাপ্ত ও কিশোরী বন্দীদের জন্য একটি চারতলা ভবন নির্মাণ, স্বজনদের সঙ্গে বন্দীদের দেখা করার জন্য একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে কারাগারের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ, ব্যাচেলর অফিসার্সদের জন্য একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ, ১২৫০ বর্গফুট, ১০০০ বর্গফুট ও ৮০০ বর্গফুট আয়তনের একটি করে পাঁচতলা কোয়ার্টার এবং ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০তলা দুইটি আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ, একটি চারতলা ভবন নির্মাণ যেখানে বন্দীদের জন্য ওয়ার্কশেড স্টোর, লন্ড্রি ও সেলুনের ব্যবস্থা থাকবে। বন্দীদের দেখতে আসা দর্শনার্থীদের অপেক্ষা করার ঘর নির্মাণসহ আরও বেশি কিছু কাজ করা হবে।
×