ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ

প্রকাশিত: ১২:১২, ৪ অক্টোবর ২০১৯

পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ

দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান পরমাণুযুদ্ধে জড়ালে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ মারা যাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যার দ্বিগুণ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির রুটজার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। খবর নিউজ উইক ও সায়েন্স এ্যাডভান্স অনলাইনের। গবেষকরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণুযুদ্ধ বেধে গেলে-এর ভয়াবহতা ঠিক কি হতে পারে তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের পরপরই এই অঞ্চলের ১০ কোটি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়বে। শুধু তাই নয়। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। বিশ্বের ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ গাছপালার বৃদ্ধি কমে যাবে। সাগরে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ফলে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ জলজপ্রাণী ধ্বংস হবে। অনেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাবে। পাশাপাশি পুরো বাস্তুতন্ত্রে এর প্রভাব পড়ায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী মারা যাবে। এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি উত্তরণের জন্য একশ বছরের বেশি সময় লাগবে। বিশ্বের মোট নয় দেশের হাতে এই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানই অনেক অল্প সময়ে পরমাণু শক্তির অধিকারী হয়েছে। রুটজার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ্যালান রোবোক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার নিকট প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান অনেকটা নাটকীয় উপায়ে পরমাণু অস্ত্রের মালিক হয়েছে। উভয় দেশের কাছেই এখন অত্যাধুনিক পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে মতবিরোধ লেগেই আছে। তবে দেশ দুটির পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান একবার পরমাণুযুদ্ধে জড়িয়ে গেলে এর পরিণতি বিশ্বকে ভোগ করতে হবে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কাশ্মীর ইস্যুতে বিশ্বসম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন। ভারতের মোদি সরকার ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। এরপর থেকে কাশ্মীরের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে দিল্লী। এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, কাশ্মীর উপত্যকার মুসলমানদের খাঁচায় পুড়ে রেখেছে মোদি সরকার। এ সময় ইমরানের ভাষণে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধের প্রসঙ্গ আসে। ইমরান বলেন, ভারত ও পাকিস্তান প্রচলিত যুদ্ধে জড়ালে যে কোন কিছুই ঘটে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ দুটি একবার যুদ্ধে জড়ালে এর ভয়াবহতা সীমান্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে। রোবক ২০২৫ সাল নাগাদ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় ফেল ‘লিটল বয়’ খ্যাত পরমাণু বোমার ক্ষমতা ছিল ১৫ কিলোটন। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের হাতে এর চেয়ে বেশি ক্ষমতার পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। ভারতের একশ ও পাকিস্তানের দেড়শ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। দেশ দুটি একবার যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের সরাসরি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। পাশাপাশি এর সঙ্গে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি, গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী কমে যাওয়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মারা যাওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই। দুদেশের যুদ্ধে এ অঞ্চলের বায়ুম-লে কোটি কোটি টন কালির গুঁড়া মিশে গিয়ে চারপাশের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলবে। এতেও অনেকের প্রাণহানি ঘটবে। ৭৪ বছর আগে বিশ্ব প্রথম পরমাণু বোমার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মানুষ দেখতে চায় না। তবে কাশ্মীর ইস্যুটি ভারত ও পাকিস্তানকে এ ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
×