ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও ভুটানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০৪, ৪ অক্টোবর ২০১৯

আবারও ভুটানকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ সংস্কৃত শব্দ ‘ভূ-উত্থান’ এর বাংলা অর্থ উচ্চভূমি। ভূ-উত্থান থেকেই ভুটান নামটি এসেছে। বৃহস্পতিবার ভুটানকে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে টানা দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়ে তাদের উঁচু থেকে নিচুতে নামিয়ে আনলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সন্ধ্যার ম্যাচে তারা ২-০ গোলে হারায় ভুটান দলকে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে ‘ড্রাগন বয়েস’ খ্যাত সফরকারী ভুটানকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ভুটানের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জেতার পাল্লা ভারি বাংলাদেশেরই। তারা জিতেছে ১০ ম্যাচে। ড্র করেছে ২ ম্যাচে। আর হেরেছে ১ ম্যাচে। ভুটানের বিরুদ্ধে এই জয় দু’টি আগামী ১০ অক্টোবর ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে নিজেদের মাটিতে কাতারকে মোকাবেলার আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আর বৃহস্পতিবারের এই জয়ের নায়ক ছিলেন একজন ‘হেডমাস্টার’। তার নাম ইয়াসিন খান। পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন, ইয়াসিন আবার কোন স্কুলের হেডমাস্টার? উত্তর হচ্ছেÑ এই হেডমাস্টার সেই হেডমাস্টার নয়। এই হেডমাস্টার মানে হেডে গোল করার মাস্টার বা এক্সপার্ট। প্রথম ম্যাচে ছিল বৃষ্টি। এ জন্য বাড়তি সুবিধা নিয়ে খেলেছিল লাল-সবুজরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টি না হওয়াতে মাঠ ছিল খটখটে শুকনো। ফলে ভুটান বেশ ভাল খেলে। যদিও সকাল এবং দুপুরে হাল্কা বৃষ্টি হয়েছিল। তবে খেলা শুরুর আগে মাঠের পানি শুকিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি বেশ গতিশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। দু’দলই প্রায় সমানতালে খেলে। তবে বল নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রমণ করার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশই। বাংলাদেশের ডিফেন্ডার রায়হান হাসান এদিন নজর কেড়েছেন তার লম্বা থ্রো দিয়ে। তার প্রতিটি থ্রোই ভুটানের রক্ষণভাগে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। একটি থ্রো থেকে তো গোলই পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এদিন তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার জায়গায় শহীদুল আলম সোহেল, ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের জায়গায় সুশান্ত ত্রিপুরা এবং মিডফিল্ডার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জায়গায় রবিউল হাসানকে নামান কোচ জেমি ডে। ৮ মিনিটে পায়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন ত্রিপুরা। তার পরিবর্তে নামেন ডিফেন্ডার রায়হান হাসান। ১০ মিনিটে সাদ উদ্দিনের পাস পান বক্সের ভেতরে থাকা বিপলু আহমেদ। প্রথমে শট না নিয়ে একজনকে কাটিয়ে এ মিডফিল্ডার যে শট নেন তা গোল হওয়ার মতো ছিল। কাউন্টার এ্যাটাকে ভুটান গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে কাবি রাজের জোরালো শট প্রতিহত করেন গোলরক্ষক সোহেল। ২৩ মিনিটে রায়হানের নিখুঁত লম্বা থ্রোয়ে বক্সের ভেতরে লাফিয়ে উঠে ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান যে হেড নেন তা আশ্রয় নেয় ভুটানের জালে (১-০)। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে গোল পেলেন ইয়াসিন। তার প্রথম গোলটি ছিল ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি যশোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু কাপে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-২ গোলে। ৩০ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে রবিউল হাসানের ক্রসে আগের ম্যাচের জোড়া গোল করা নাবিব নেওয়াজ জীবনের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। সুপার সাব খ্যাত রবিউল হাসান এদিন শুরুর একাদশে ছিলেন তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাই দ্বিতীয়ার্ধে তাকে উঠিয়ে ইব্রাহিমকে, সাদকে উঠিয়ে ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিলকে, মামুনুল ইসলাম মামুনকে উঠিয়ে সোহেল রানাকে নামিয়ে এবং জীবনের পরিবর্তে আরিফুর রহমানকে এবং রহমতের জায়গায় ইয়াসিন আরাফাতকে নামান বাংলাদেশ কোচ। ৬৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। এবারও গোলদাতা ইয়াসিন খান। এবার ডানপ্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের ক্রসে বক্সের ভেতরে মাথা ছুঁয়ে গোল করেন তিনি (২-০)। এরপর আরও বেশ কটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। নইলে জয়ের ব্যবধান আরও বড় করতে পারতো তারা। এখন দেখার বিষয়, আজ ভুটানকে দু’বার হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ক’দিন পর কাতারকে মোকাবেলা করে কেমন ফল করে লাল-সবুজবাহিনী।
×