ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতিবর্ষণ, বন্যা, জলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৪ অক্টোবর ২০১৯

অতিবর্ষণ, বন্যা, জলাবদ্ধতা

বর্ষা মৌসুম বিগত হলেও শরতের মাঝামাঝি এসে শোনা যাচ্ছে অসময়ে বন্যার পদধ্বনি। এর একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত নিম্নচাপজনিত কারণে অকস্মাৎ প্রবল বর্ষণ তথা অতি বৃষ্টি। এবার বর্ষায় আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। ফলে বন্যার আশঙ্কাও দেখা যায়নি তেমন। দ্বিতীয়ত, এবার ভারতে বিশেষ করে উত্তর ভারত, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে ঝরেছে প্রবল বৃষ্টিপাত, যাকে বলে ভারি বর্ষণ। এর ফলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বড় বড় শহর পর্যন্ত তলিয়ে গেছে প্রবল বর্ষণ ও বন্যার পানিতে। নদ-নদীগুলো ফুলে ফেঁপে উঠেছে ভারি বর্ষণ ও হিমালয় থেকে নেমে আসা প্রবল ঢলে। সে দেশে বিপুল ক্ষয়ক্ষতিসহ ব্যাপক প্রাণহানির খবরও আছে। ফারাক্কাসহ সীমান্তসংলগ্ন বাঁধগুলোর সব স্লুইস গেট খুলে দেয়ায় সেই পানি প্রবল বেগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। ফলে তিস্তা-পদ্মার পানিও রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং অনিবার্য প্লাবিত করেছে সন্নিহিত নিম্নাঞ্চলগুলো। মাত্র সোয়া ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে প্রায় তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে রাজধানী ঢাকা। জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বে একটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধি, আবহাওয়ার উপাদানসমূহে পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণ এবং এদের প্রভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ বিপন্নপ্রায়। জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী সমস্যা হলেও এর প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশসমূহ। ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তনের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি এবং প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ নির্বিচারে নিধনের কারণে বাংলাদেশের বিপন্নতা খুবই ভয়াবহ। ভৌগোলিক কারণে এখানকার নিচু ও সমতল ভূমি, ঋতুবৈচিত্র্য এবং বর্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি। কৃষি কাজ জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঢাকায় জলাবদ্ধতায় আগামী ৩৫ বছরে ক্ষতি হবে কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে কয়েক শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় জলাবদ্ধতা ও নানা প্রাকৃতিক সমস্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে রাজধানী ঢাকা। জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় সমস্যা খাল ও নদী দখল হয়ে যাওয়া। দখলের কারণে ঢাকার সব খাল ও ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোন কোনটির অস্তিত্ব পাওয়া দুষ্কর। খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে গেলে আসে বাধাও। কেউ কেউ স্থগিতাদেশের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখে। কয়েক মাস আগে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠনের কথা জানিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি মেয়র। তাদের ওই বক্তব্য নগরবাসীকে আশাবাদী করে তুলেছে। ঢাকার অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় পরিসরে কাজ হাতে নেয়ার চিন্তা ও পরিকল্পনা যে তাদের রয়েছে তা নগরবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ কোন তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। এমনকি এক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার কোন বরাদ্দও নেই। তবে শুধু ঢাকাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের এই কুফল বাংলাদেশের সর্বত্রই বিরাজমান। জলবায়ুগত এই বিপন্নতা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর জন্য যে উন্নত বিশ্ব দায়ী, তা একাধিকবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেছেন। ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা উন্নত বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পেরেছেন তিনি। উন্নত বিশ্বকে কোন রাখঢাক না করেই বিভিন্ন পরিবেশ বা জলবায়ু সম্মেলনে এমনকি সম্প্রতি জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার সময়ও বলেছেন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত পাশ্চাত্যই দায়ী। শিল্প বিপ্লবের কারণে অতিমাত্রায় কার্বন গ্যাস নিঃসরণের ফলেই পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে এজন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
×