ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টম হ্যাঙ্কস ব্রিজ অব স্পাই

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ৩ অক্টোবর ২০১৯

টম হ্যাঙ্কস ব্রিজ অব স্পাই

সম্প্রতি গোল্ডেন গ্লেবের আজীবন সম্মাননা ‘সেসিল বি ডিমিল এ্যাওয়ার্ড’ টম হ্যাঙ্কস। তারই অভিনীত একটি সিনেমা নিয়েই আজকের পর্যালোচনা। স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তখন। সোভিয়েত এবং আমেরিকা পরস্পরের বিরুদ্ধে শত শত গুপ্তচর নিয়োগ করছে। আর এরকম একজন গুপ্তচর আটক করতে পারা রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিশাল ব্যাপার ছিল তখন। ঘটনার শুরু এরকমই এক স্পাইকে আটক করা থেকে। ১৯৫৭ সাল। ব্রুকলিনের এক স্টুডিওতে হানা দেয় এফবিআই। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এই পর্যন্ত আসতে। এফবিআইয়ের লাখ ছিল রুডলফ এ্যাবেল নামের এক পেইন্টার। সাদাসিধে একজন পেইন্টার হলেও সে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন গোয়েন্দা। বছরের পর বছর ধরে খোঁজার পরু এ্যাবেলকে গ্রেফতার করে এফবিআই। এফবিআই যখন হন্য হয়ে তল্লাশি করছিল তখন তিনি অত্যন্ত নির্লিপ্তভাবে নিজের রঙের প্যালেট পরিষ্কার করার অনুমতি চান। রঙের প্যালেটে ছোট্ট একটি একটি কাগজ ডুবিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। যেটা এফবিআই তাৎক্ষণিকভাবে খেয়াল করেনি। শত্রু হওয়া সত্ত্বেও তার মেধা খোদ সিআইএকে মুগ্ধ করেছিল। পারমাণবিক বোমা এবং কৌশলগত অনেক তথ্য তিনি সোভিয়েতে পাচার করেছিলেন। গোয়েন্দা নীতি অনুযায়ী সিআইএ তাকে অর্থের বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানায়। রুডোলফ এ্যাবেল সরাসরি এই প্রস্তাবে রাজি হন না। বিচারে মারাত্মক সব চার্জ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। সে সময় ধর্ষক বা সিরিয়াল কিলারদের থেকেও ঘৃণ্য ব্যক্তি ছিল প্রতিপক্ষের স্পাইরা। আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াতেন না। অনেক সময় নিয়ম রক্ষার্থে নামমাত্র আইনজীবী পেতেন তারা। নিতান্তই মানবতার খাতিরে প্রাইভেট ইন্সুর‌্যান্স ল’ ইয়ার জেমস ডনোভানকে রুডোলফ এ্যাবেলের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এই ধরনের কাজ করা যদিও ডনোভানের কাজ ছিল না। জুরি বোর্ড, জাজ সহ সকলেই এই গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে ছিলেন। সাধারণ মানুষ ফাঁসির দড়িতে একজন স্পাইকে ঝুলতে দেখতে চাচ্ছিল। কিন্তু ডনোভান বেঁকে বসেন। আইনের মারপ্যাঁচ শুরু করেন তিনি। সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকার মতো সামান্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক বাধিয়ে দেন বিচারের সময়। সে সময় কোন গুপ্তচরকে তার আইনজীবী রক্ষা করার কোন চেষ্টাই করতেন না। কিন্তু সোভিয়েত এক স্পাইয়ের প্রতি সহানুভূতির আচরণ ডনোভানকে নিউইয়র্কের সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তিতে পরিণত করে। রাস্তা থেকে সাবওয়ে এমনকি নিজের বাড়িতেও ডনোভানকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছিল। এদিকে এ্যাবেলের সঙ্গে ডনোভানের একটা শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডনোভানের দৃষ্টিতে স্পাই লোকটি একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কারণ সে তার নিজের দেশকে এখনও রক্ষা করছে। ডনোভান কোনরকমে সবাইকে বুঝাতে পারেন এরকম একজন সুপার স্পাইকে পেতে সোভিয়েত ইউনিয়ন মরিয়া হয়ে উঠবে এবং তার বিনিময়ে আমেরিকা অনেক কিছু পেতে পারে। সুযোগ আসে দ্রুতই। ১৯৬০ সালে আমেরিকার গোয়েন্দা বিমান ট-২ কে সোভিয়েত ইউনিয়নের আকাশে গিয়ে ছবি তোলার সময় ভূপাতিত হয়। মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয় বিমান। পাইলট আটক হন। ৭০০০০ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে এই বিমানগুলো ক্যামেরা একবার ঘুরিয়েই ২০০০ বর্গমাইল এলাকার ছবি তুলতে পারতো। মার্কিনীদের ধারণা ছিল এত উচ্চতায় কোন সোভিয়েত মিসাইল পৌঁছাতে পারবে না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফল হন পাইলট গ্যারি পাওয়ার্স। সুযোগ আসে নিজেদের বন্দী বিনিময়ের। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্ক তখন এতই বাজে যে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা সম্ভবই না। আরেকটি বড় সমস্যা ধরা পড়ার পর গুপ্তচরকে নিজেদের বলে স্বীকার করে নেয়ার ঘটনা খুব কম। এদিকে অদ্ভুত কিছু চিঠি আসতে থাকে এ্যাবেলের নামে। পূর্ব বার্লিন (সোভিয়েতপন্থী) থেকে আসা এসব চিঠি ইঙ্গিত দেয় যে সোভিয়েতরা বিনিময়ে আগ্রহী। সিআইএ ডনোভানকে বার্লিন যেতে অনুরোধ করে। কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক পরিচয় বা ক্ষমতা ছাড়াই বার্লিনের দিকে যাত্রা শুরু করেন তিনি। অবস্থা বেগতিক হলে সিআইএ তার জন্য কিছুই করতে পারবে না তাও বলে দেয়া হয়। এমন এক বন্দী বিনিময়ের আলোচনা করতে যাচ্ছেন তিনি যার অস্তিত্বই কেউ স্বীকার করবে না। শেষের ঘটনা জানতে সিনেমাটি দেখতে হবে। স্পিলবার্গ বা টম হ্যাংকস কাউকে নিয়েই নতুন করে বলার দরকার হয় না। সিমেনাটি সত্যি ঘটনার উপরে নির্মিত, সঙ্গে স্পিলবার্গের পরিচালনা এবং টম হ্যাঙ্কস প্রাণবন্ত অভিনয়ে সর্বোচ্চটা বের হয়ে এসেছে।
×