ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সফিউল্লাহ আনসারী

অপকর্ম প্রতিরোধে

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৩ অক্টোবর ২০১৯

অপকর্ম প্রতিরোধে

মানুষের জীবন বাঁচাতে ওষুধ অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। জীবন রক্ষার ওষুধ সেবন করে যদি জীবন নাশ হয় তখন চিকিৎসার কোন মানেই থাকে না। অথচ আমার দেশে এই জঘন্য অন্যায় কাজটি অহরহ করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু বিবেকহীন ব্যবসায়ীরা। সরকারীভাবে অভিযানে প্রায়ই ধরা পড়ছে নকল ওষুধ। ধরাছোঁয়ার বাইরে বেশিরভাগ সময়ই থাকছে অপরাধীদের সিন্ডিকেট। কয়েকদিন পর আবার পাইকারী বাজার হয়ে খুচরো দোকানে অতি সহজেই হুবহু প্যাকেট আর মোড়কে নকল ওষুধ চলে যাচ্ছে রোগীর কাছে। এই নকল ওষুধ জীবন বাঁচানোর নামে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের মূল্যবান জীবন। নকল ওষুধ সেবনে রোগতো সারছেই না বরং কখনো শোনা যায় মানুষের মৃত্যুর খবর। এমনটি কারও কাম্য নয়, তারপরও মানুষরূপী অসাধু চক্রটি জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। দ্রুত বিকাশমান ঔষধশিল্প আমাদের জন্য ভাল, কিন্তু নকল আর প্রাণঘাতী ওষুধ উৎপাদন বিপণন শুধু অপরাধই নয় অমানবিকও। দেশে রয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, আইনও আছে এবং ওষুধ দোকান মালিকদের সংগঠনও আছে কেমিস্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট এ্যাসোসিয়েশন নামে। তারপরও নকল ওষুধ কিভাবে বাজারে আসে এই প্রশ্ন প্রত্যেক সচেতন মানুষ ও রোগীদের। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ওয়াকিবহাল থাকার পরও ভেজাল-নকল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য দোকানেও। অথচ তারা মুখে বলছেন নকল বিরোধী সোচ্চার থাকার কথা, অথচ অবৈধভাবে ব্যবসাও চালাচ্ছে দেদার। ওষুধের পাইকারি ও বড় মার্কেট মিডফোর্ট থেকেই সারা দেশে নকল ওষুদের চালান যাচ্ছে বলে জানা গেছে। মিডফোর্টসহ সারাদেশে এই মুহূর্তে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের ব্যাপকতা কতটা ভয়াবহ তা মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে না। কারণ নকল ঔষধ চেনার উপায় তাদের জানা নেই। এটা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের জানানোর দায়িত্ব। না হলে মানুষ ঠকতেই থাকবে আর জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে রোগীর জীবন হবে বিপন্ন। বিভিন্ন সময় অভিযানে উদ্ধার হওয়া ওষুধের পরিমাণ ও ব্যাপকতা দেখে অনুমেয় যে, আমরা কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি নকল ওষুধ নামক ঘাতকের কাছে। আর জিম্মি হয়ে আছে ক্রেতা সাধারণ! উপার্জিত কষ্টের টাকায় কেনা ওষুধ কিনে প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকদের প্রতারণায় আর যেন কোন রোগী না ঠকে সেদিকে সরকার কঠোর হবেন এই প্রত্যাশা এবং দাবি সবসময়ের। নাগরিক অধিকার চিকিৎসাসেবা আর চিকিৎসার মূল বিষয় হচ্ছে ওষুধ। আর নকল ওষুধ যেন কোন দোকানি বিক্রি করতে না পারে সেদিকেও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। দেশের সকল পর্যায়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। জেলা পর্যায়ে বসে বসে তদারকি না করে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যন্ত ড্রাগ সুপার সততার সঙ্গে যেন দায়িত্ব পালন করেন সেদিকেও কঠোর নজদারি দরকার। রোগী তথা ভোক্তাসাধারণের আরও সচেতনতা ও আমাদের চিকিৎকদের মেডিসিন লেখার সময় সর্তকতা অবলম্বন করা অতীব জরুরী। বাংলাদেশে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণের অভিযোগ বহুদিনের। এ অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য আমরা সাধারণ জনগণ ও রোগীদের দাবি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনস্বাস্থ্যের জন্য শতভাগ বিশুদ্ধ ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করুন যাতে আর একটি জীবনও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না পড়ে। এবং এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকে পর্যাপ্ত জনবল ও ওষুধ পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করাও জরুরী। ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে
×