ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা - বিষয় ॥ নকল ওষুধ

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৩ অক্টোবর ২০১৯

সমাজ ভাবনা -	বিষয় ॥ নকল ওষুধ

শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ হলেই আমরা ছুটে যাই হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকের ডাক্তারদের কাছে। আর সেই ডাক্তার যখন সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ লিখেন আমরা সেই ওষুধ খাই সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী সেই ওষুধই যদি ভেজাল থাকে তবে জীবন রক্ষা তো দূরে থাক, মৃত্যুর ধারেই পৌঁছে দেয় সেই ওষুধ। উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ, এখানে আঠারো কোটি মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়তই মানুষ অসুস্থ হচ্ছে চিকিৎসা নিচ্ছে। উন্নয়নশীল আমাদের এই দেশে মেডিসিনের ব্যবসা বেশ রমরমাই বলা যায়। ওষুধ শিল্প খাতে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও নকল ওষুধ উৎপাদনেও পিছিয়ে নেই অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন পর পরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওষুধের দোকানে অভিযান চালায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওইসব অভিযানে চোরাই অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধও উদ্ধার হয় নিয়মিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়, জেল জরিমানাও হয়; কিন্তু নকল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ থামে না। রোগব্যাধি সারাতে কিংবা জীবন বাঁচাতে মানুষ চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন বা পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ কিনতে যায় দোকানে। কিন্তু কেনার সময় অনেকের পক্ষেই বোঝার উপায় থাকে না ক্রয় করা ওষুধটি আসল নাকি নকল। এছাড়াও মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রচুর ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিনের মধ্যেও নতুন করে মেয়াদ বসিয়ে চালিয়ে দেয়া হয় যা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন নামকরা কোম্পানির নাম ব্যবহার করে চালিয়ে দেয়া হয় মেডিসিনের মোড়ক পরিবর্তন করে। এভাবে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় অনেক কোম্পানি, ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের জরিমানা করলেও এটা বন্ধ হচ্ছে না, ফলে আমরা ভোক্তারা ব্যাপক শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক ভাবেও প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এছাড়াও জীবন ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যায়। এই অবস্থায় আমাদেরও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে এবং ডাক্তারদের প্রতিও অনুরোধ থাকবে যে, তারা প্রেসক্রিপশনে ভাল মানের ওষুধ লিখেন যাতে রোগী প্রতারিত না হয়। আমাদের ভোক্তাদের উচিত ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেয়ার সময় ভালভাবে দেখে নেয়া। খালি চোখে যতটুকুনই দেখা যায়। দরকার হলে ওষুধের আগের প্যাকেট ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে দুটোর মধ্যে কোন তফাত আছে কি’না। সাধারণভাবে হলেও আমাদের পরীক্ষা করে ওষুধ কেনা প্রয়োজন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগই নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল। অতএব আমাদের ভোক্তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে। ওষুধ ক্রয় করার সময় খেয়াল রাখতে হবে ওষুধ অন্যরকম দেখা যাচ্ছে কি’না, মেয়াদ ঠিক আছে কি’না এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত আমাদের। আরেকটি যে সমস্যার মধ্যে আমরা প্রতিনিয়তই মুখোমুখি হচ্ছি তা হলো ওষুধের দাম নিয়ে। ফার্মেসিতে গেলে দেখা যাচ্ছে যে ফার্মেসি মালিক ইচ্ছে মতো নিজেরা দাম বসিয়ে নিচ্ছে কারণ বাক্সের গায়ে দাম লিখা থাকার কারণে ভোক্তা দামই যাচাই করতে পারছে না। প্রত্যেকটি ওষুধের পাতায় যদি দাম লিখা থাকে তাহলে যারা ওষুধ ক্রয় করতে যাবে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়। সর্বোপরি ভোক্তা সচেতনতা ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে যাতে কেউ ভেজাল, নকল, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করতে না পারে। টাঙ্গাইল থেকে
×