ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুখতে পারবে না কোন শক্তি

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২ অক্টোবর ২০১৯

রুখতে পারবে না কোন শক্তি

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, কোন শক্তিই চীন দেশ বা এর জনগণকে রুখে দিতে পারবে না। এই শক্তিধর দেশের ভিত্তি কাঁপানোর মতো কোন শক্তি নেই। কোন শক্তিই চীনের জনগণ এবং চীন দেশকে সামনে যেতে বাধা দিতে পারে না।’ বিবিসি, এএফপি ও সিএনবিসি। শি জিন পিং বিশেষভাবে কোন দেশের নাম উল্লেখ না করে বরং নিজ দেশের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, চীন শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। শি তার ১০ মিনিটেরও কম সময় দেয়া বক্তৃতায় বলেন, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকুক এবং চীনা জনগণ দীর্ঘজীবী হোক। ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গণচীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করল চীন। কমিউনিস্ট বাহিনী রক্তাক্ত একটি গৃহযুদ্ধে জয় পাওয়ার পর ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর মাও জে দং গণচীন প্রতিষ্ঠার করেন। তারপর থেকে অসাধারণ গতিতে আধুনিক চীনের উন্নয়ন ঘটে, কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র হলেও চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রণমূলক রাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানী বেজিংয়ের কেন্দ্রস্থলে বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। তিয়ানআনমেন স্কয়ারের ওই কুচকাওয়াজে ১৫ হাজার সৈন্য অংশ নেয় এবং চীনের সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী করা হয়। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাও গণচীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ঠিক সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মাওয়ের অনুরূপ পোশাকে সজ্জিত শি জিন পিং বক্তব্য রাখেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই মাওয়ের পোশাক পরেন ছিলেন। মাওয়ের স্মৃতির ঝাঁপি মেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান শি। তিনি ঐক্য, চলমান সংগ্রাম ও চীনের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। এরপর একটি গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি সামরিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় মাঝে মাঝে হাত নাড়েন তিনি, আর সৈন্যরা জোরালো শব্দে আনুগত্য প্রকাশ করে জবাব দেয়। ৭০ বছর আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন কুয়োমিনটাং (কেএমটি) বা জাতীয় পার্টিকে পরাজিত করার পর মাও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজতন্ত্রের পতনের পর এই পক্ষ দুটি ১৯২০ সাল থেকে রক্তক্ষয়ী এক গৃহযুদ্ধে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলোতে চীন ‘উঠে দাঁড়িয়েছে, ধনী হয়েছে এবং আগের দশকগুলো থেকে শক্তিশালী হয়েছে।’ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অন্যতম ঝাং গে বলেন, ‘প্রধান বিষয় হলো চীনের কাহিনীগুলো বলা এবং পার্টি ও দেশের ওপর চীনা জনগণের বিশ্বাস তুলে ধরা।’ চীন বলছে, তারা সম্পূর্ণ নতুন একটি রাজনৈতিক পদ্ধতির যাকে ‘চীনা ধরনের সমাজতন্ত্র’ বলা হচ্ছে, উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং এই পদ্ধতিটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে। কুচকাওয়াজে দেশটির প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা, জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি এবং ৯৭ দেশের সামরিক এ্যাটাশে উপস্থিত ছিলেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সম্প্রতি বলেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেজিং ‘পেশীশক্তি’ দেখাচ্ছে না বা এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না। ‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করাই এ প্রদর্শনীর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এ কুচকাওয়াজে অংশ নেয়, ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শিত করা হয় এবং ১৬০টি এয়ারক্রাফট আকাশে উড়ে। চাং এ্যান এভিনিউতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এরপর পদাতিক সৈন্য, সমরাস্ত্র ও বিমানগুলো তিয়ানআনমেন স্কয়ার অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। কুচকাওয়াজে চীনের আট হাজার সদস্যের শক্তিশালী শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি দলও প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। নিজেদের বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী (পিএলএ) খুব উৎফুল্ল ছিল।
×