ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের অভিযোগে পল্টন থানার ওসি সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১ অক্টোবর ২০১৯

ধর্ষণের অভিযোগে পল্টন থানার ওসি সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বরখাস্তকৃত ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের নির্দেশও দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মোঃ সোহেল রানা এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পল্টন থানার ওসির বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার কথা বলে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এজন্য পুলিশ সদর দফতর ওসিকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী রাতে তাকে বরখাস্ত করে ডিএমপি। পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বরাবর এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হকের বাড়ি আর তার গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়। কলেজে পড়ালেখা করা অবস্থায় ওসি মাহমুদুল হকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে ফোনে কথা হতো। ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ওসি তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় ডেকে আনেন। ঢাকায় আসার পর ওসি মাহমুদুল তাকে পল্টনের ক্যাপিটাল হোটেলের একটি রুমে নিয়ে যান। হোটেলে তাকে খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এরপর ওই নারী অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। ওই নারীর জ্ঞান ফেরার পর তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ সময় ওসি তাকে জানান, তিনি তাকে ভালবাসেন। তাকে বিয়ে করতে চান। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় বলে নানা অজুহাতে এমনকি কোরান শরীফের ওপরে হাত রেখে ওই নারীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, বিয়ের কথা বলে পরে ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় ওসি। গত বছরের ২০ অক্টোবর ওই নারী বুঝতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ সময় ওই নারী বিষয়টি মাহমুদুল হককে জানান। ওসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গর্ভপাত করতে বাধ্য করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। পরে ওই নারী বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে ওসি মাহমুদুল একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে ওই নারী ওসির অফিসে যান। এমনকি ওসির বাবার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানান। এরপরও বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় গত ১২ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই নারী। বিষয়টি তিনি ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি, এডিসিসহ সবাইকে জানান। কোন প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি আইজিপির কাছে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওসি মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগটির তদন্ত করেন ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা বেগম। তিনি জানান, ওই নারীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক থাকার প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন গত ২৫ সেপ্টেম্বর ডিএমপি সদর দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে করা অভিযোগে সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, তাকে রাতেই বরখাস্ত করা হয়েছে।
×