ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যার শঙ্কা

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১ অক্টোবর ২০১৯

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যার শঙ্কা

শাহীন রহমান ॥ দেশ থেকে মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) যায় যায় করছে। ঠিক এমনি মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড আভাস দিয়েছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি স্বল্প মেয়াদী বন্যা আসছে। তারা বলছেন, বিহার, উত্তর প্রদেশ উত্তরাখ- এবং ঝাড়খ-ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই পানি পদ্মা অববাহিকা দিয়ে নেমে আসছে। ফলে এই সপ্তাহের মধ্যে একটি স্বল্প মেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে রাজশাহী, চাঁপাই, কুষ্টিয়া এবং নাটোর এলাকা। বন্যা ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হলেও এর প্রভাবে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বৃষ্টিপাতের কারণে দেশে বেশ কয়েকদিন ধরে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের বৃষ্টির পরিমাণও কমে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে দেশে বড় ধরনের বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তবে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত আরও দুএকদিন হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, উজান থেকে বৃষ্টির পানি নেমে আসছে। পানি আসার কারণে এই সপ্তাহের মধ্যে পদ্মা অববাহিকায় স্বল্প মেয়াদী বন্যা দেখা দেবে। তিনি বলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পানি এখন নামতে শুরু করেছে। যে পরিমাণ পানি উজানে রয়েছে তাতেই বন্যা সৃষ্টি হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, বন্যা ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে উজানের প্রায় সব নদীর পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। হিমালয় থেকে নেমে আসা পানির ৯০ ভাগ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ কারণে উজানে কোন এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হলে তার প্রভাব এদেশের ওপর পড়বেই। এ বছর দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল ২ দফায় ভয়াবহ বন্যা হলেও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী অববাহিকায় কোন বন্যা হয়নি। তারা জানান, বিহারে ভারি বৃষ্টির পানির সবটুকুই পদ্মা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখ- এবং ঝাড়খ-ের বৃষ্টির পানিও এই নদী দিয়ে প্রবাহিত হবে। এ কারণে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হলেও এখানে এর প্রভাব পড়বে না। যদিও এর প্রভাবে দেশে বেশ কয়েকদিন যাবত মাঝারি থেকে হাল্কা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওইসব প্রদেশে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এসেছে। ফলে নতুন করে আমাদের এখানে ভারি বৃষ্টিপাতের কোন আশঙ্কা নেই। তবে তিনি বলেন, যেহেতু উজানে বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছে সে কারণে ওই পানি নেমে এলে নদীর পানি উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি বলে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, ক্রমশই ভয়াল হচ্ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি। লাগাতার বর্ষণে বিহারে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৯ জন। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে বিমানবাহিনী নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের খবরে বলা হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল বর্ষণে ভেঙ্গে পড়েছে সড়ক ও রেলপরিবহন ব্যবস্থা। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বন্যাবিধ্বস্ত এলাকার সব স্কুলে। এ অবস্থায় বিহার সরকার বিমান বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে। আকাশ পথে বিহারের রাজধানী পাটনাকে বিশাল হ্রদের মতো মনে হচ্ছে। বিহারের প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরপ্রদেশেও পরিস্থিতি একইরকম ভয়াবহ। প্রবল বর্ষণে নাজেহাল উত্তরাখ-, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশও। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খ-ের অবস্থা একই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেশী ঝাড়খ-ে লাগাতার বৃষ্টির কারণে সেখানে অবস্থিত বিভিন্ন নদ নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, উজানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তা নেমে এলেই বাংলাদেশে বন্যার দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছে উত্তরাখ-, উত্তর প্রদেশ এবকং বিহারের সব পানিই পদ্মা অববাহিকা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে সেখানে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে আর বৃষ্টিপাত না হলেও, ওই পানি নেমে এলেই এখানে স্বল্প মেয়াদী বন্যা দেখা দেবে। উজানের বৃষ্টির কারণে এবার মধ্য জুলাইয়ে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে জুলাইয়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জসহ ২৮টি জেলা প্লাবিত হয়। বন্যায় শতাধিকের মৃত্যুর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ লাখের বেশি মানুষ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আশ্বিনের মাঝামাঝিতে এসে মৌসুমি বায়ু বিদায়বেলায় প্রায় প্রতিদিনই সারা দেশে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আরও দুই-তিন দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, দেশের উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে। দেশের ভেতরেও বৃষ্টি হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসার পানি এবং দেশের বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তারা উল্লেখ করেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও নাটোর এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার শঙ্কা রয়েছে। বুধ-বৃহস্পতিবারের দিকে এ বন্যা দেখা দিতে পারে। মৌসুমি বায়ু দেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগারে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। তারা জানায়, বর্ষার শেষ সময়ে এসে এখন কয়েক দিন বৃষ্টি বড়েছে। হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকবে। সেপ্টেম্বরের এ সময়ে এমন আবহাওয়া স্বাভাবিক।’
×