ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে ও আলোচনায় হাছন রাজা লোক উৎসব উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ অক্টোবর ২০১৯

গানে ও আলোচনায় হাছন রাজা লোক উৎসব উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মরমি কবি ও বাউল হাছন রাজা। তিনি সর্বমানবিক ধর্মীয় চেতনার এক লোকায়ত ঐক্যসূত্র রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার ও সুরকার। নিজ গুণেই তিনি সঙ্গীত ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। তার জন্ম সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে ১৮৫৪ সালে। তার ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গান আর আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে চতুর্থ হাছন রাজা লোক উৎসব উদ্যাপন হয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সোমবার সন্ধ্যায়। হাছন রাজা পরিষদ আয়োজিত এ উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার, বাংলাদেশে ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ মনজুর হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্ উল ইসলাম ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক ড. এ কে এ মুবিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নজিবুর রহমান বলেন, আমি তিনটি কারণে এই অনুষ্ঠানে এসেছি। প্রথমত আমার বাড়ি যেহেতু সুনামগঞ্জে, সেখানে সবচেয়ে খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি যারা আছেন তারমধ্যে মরমি কবি হাছন রাজা অন্যতম। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছি। দ্বিতীয় এই সংগঠনে যারা জড়িত আছেন তাদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। তৃতীয়ত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এই জ্ঞান ভিত্তিক সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে দেশে যত মুণি-ঋষি আছেন তাদের সম্মান দেখানো, তাদের যে কার্যক্রম ও জীবনকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা। বাঙালী, দেশ ও জাতীয় সংস্কৃতির মূলধারায় এক সুপরিচিত নাম হাছন রাজা। তার গান এই অঞ্চলের মরমি সঙ্গীত ও আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনার জগতকে আরও প্রসারিত করেছে। তাকে নিয়ে আমরা সিলেটবাসী অনেক গর্ব করি। আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবনায় তিনি রেখে গেছেন এক মহান আদর্শ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসংশিত সাত শতাধিক গানের রচয়িতা মরমি কবি হাছন রাজা। অল্প বয়স থেকে তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে থাকেন। মায়ের কষ্ট অনুভব, বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু, প্রকৃতির সৈন্দর্য আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি অনেক শিখিয়েছে, অনেক আধ্যাত্মিক ভাবানুভূতির দ্যুতনা সৃষ্টি করেছে। দেশ জাতি তার কাছে ঋণি। এখন সময় এসেছে হাছন রাজাকে পূর্ণ গবেষণা ও চর্চার মধ্যদিয়ে তার গান ও দর্শনকে সঠিকভাবে তুলে ধরার। অনুষ্ঠানের শুরুতে হাছন রাজার জীবন ও কর্মের উপর ‘সুরমা পাড়ের গানের রাজা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। স্মরণিকাটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন হাছন রাজা মিউজিয়াম ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সামারীন দেওয়ান। অন্যান্য অতিথিরা বলেন, হাছন রাজার পনেরো বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হলে সংসার ও জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত হয়। যৌবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত শৌখিন ও ভোগবিলাসী, কিন্তু পরিণত বয়সে সব বিষয়-সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ জীবন যাপন করেন। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও হাছন রাজা ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় অনেক আধ্যাত্মিক গান রচনা করেন। তার গানে প্রেম ও বৈরাগ্যময় আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। আলোচনা শেষে বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় হাছন রাজার কালজয়ী সব গান।
×