ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাবলিক ভার্সিটি

অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতি নীতিমালা বাস্তবায়ন এখনই নয়

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১ অক্টোবর ২০১৯

অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতি নীতিমালা বাস্তবায়ন এখনই নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষকদের তীব্র আপত্তির মুখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা এখনই বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে সড়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের তোলা আপত্তির বিষয়গুলো ভালভাবে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। নেয়া হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতামত। শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জোট বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী, ইউজিসির মেম্বার (বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম, ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোঃ কামাল উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নব্বই জন প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠক শেষে অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষকরা অত্যন্ত খোলামেলাভাবে তাদের মতামত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ওপর থেকে কোন নীতিমালা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। শিক্ষকরা তাদের মর্যাদা, ইনক্রিমেন্ট, গবেষণা ও গবেষণার আর্থিক সুবিধাসহ নানা সমস্যার কথা বৈঠকে তুলে ধরেন। শিক্ষামন্ত্রী শীঘ্রই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলবেন। নানা বিষয়ে শিক্ষকদের আপত্তির মুখে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, এ বিষয়ে আগামী নবেম্বরে ফের বৈঠক হতে পারে। তার আগে প্রকাশিত খসড়া নীতিমালায় কোথায় আপত্তি, আপত্তি বাদ দিয়ে কি করলে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া উন্নত হবে তার কৌশল বের করতে শিক্ষকদের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছেন মন্ত্রী। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নামে অভিন্ন নীতিমালা করতে চাইছে তাতে শিক্ষকদের শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়ার শামিল। শিক্ষকরা বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন এই নীতিমালা গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে কদিন ধরেই নতুন নীতিমালা নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। আলাদা আলাদাভাবে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশে করা এ নীতিমালার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষক সমিতিগুলো। প্রায় প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দই নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে একে ‘অভিন্ন নীতিমালার নামে দেশকে মেধাশূন্য করার নীলনক্সা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই অগ্রহণযোগ্য এ নীতিমালা সামনে আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা। জানা গেছে, গত কয়েক বছরেই ইউজিসি একটি অভিন্ন নীতিমালার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু নিজস্ব আইনে চলা প্রত্যেক বিশ^বিদ্যালয়কে এক নীতিতে আবদ্ধ করার পক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের অবস্থান না থাকায় ইউজিসির চিন্তা ব্যর্থ হয়েছে সব সময়। তবে এ ধরনের নীতিমালা বিরুদ্ধে অসন্তোষ থাকার মধ্যেই প্রায় এক বছর ধরে আবার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। প্রথম দিকে শিক্ষকদের কোন প্রতিনিধিও ছিলেন না এ প্রক্রিয়ায়। এক পর্যায়ে সকল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ‘ন্যূনতম’ অভিন্ন নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা নাম দিয়ে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক প্রতিনিধিও রাখা হয়। কিন্তু শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সব সময়েই এ ধরনের উদ্যোগের প্রতিবাদ এসেছে। ঠিক এরই মধ্যে সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালার খসড়া তৈরির কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে এক সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এতে নতুন করে বাংলাদেশী অথবা বিদেশী শিক্ষক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও যুক্ত করা হয়। সভায় অভিন্ন নীতিমালাটি সভায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে ইউজিসির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়। খসড়া নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য উচ্চতর ডিগ্রীতে সিজিপিএ-৩ দশমিক ৫ ও চারুকলা বিষয়ে ৩ দশমিক ২৫ প্রস্তাব করা হয়েছে। নিয়োগের জন্য লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা আয়োজনের কথা খসড়া নীতিমালায় বলা হয়। তবে বলা হয়, প্রভাষকের পরের পদগুলোতে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে নিয়োগ দিতে পারবে। সভা শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, অভিন্ন নীতিমালা শিক্ষামন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। তবে একটি বিষয় যুক্ত করা বলা হয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন করে একটি বিষয় যুক্ত করে এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য কেবিনেট অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ইউজিসি থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্রমে অসন্তোষ বাড়ছিল সকল পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রতিবাদে সোচ্চার হন। বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচীও শুরু করেন শিক্ষকরা।
×