ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার দাবি উঠেছে হাবিপ্রবি ভিসি বহিষ্কারের

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১ অক্টোবর ২০১৯

এবার দাবি উঠেছে হাবিপ্রবি ভিসি বহিষ্কারের

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ এবার যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষককে বাঁচাতে ভুয়া শিক্ষা সফর সূচীর অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) মিথ্যা তথ্য প্রদান ও সত্য তথ্য গোপন করারও অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রীর যৌন নির্যাতনকে মানসিক নির্যাতন উল্লেখ করে চিঠি দেয়া এবং চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থলে গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণিত তথ্য গোপন করায় উপাচার্য নৈতিকভাবে তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন জানিয়ে তাকে বহিষ্কার দাবি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির পাশাপাশি দিনাজপুর মহিলা পরিষদ, উদীচীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক শিক্ষক সফিকুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক রমজান আলীর বিরুদ্ধে ছাত্রীর যৌন হয়রানি ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা পেয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। এরপরও ওই শিক্ষককে বহিষ্কার না করে তাকে বাঁচানোর জন্য বিগত দেড় বছর ধরে চারটি রিজেন্ট বোর্ডে অভিযুক্ত শিক্ষক রমজান আলীকে বাঁচাতে ভিসি কলকাঠি নেড়ে চলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযুক্ত যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষক রমজান আলীকে স্থায়ী বহিষ্কার নিয়ে উপাচার্যের টালবাহানা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি গত ৯ জুলাই ইউজিসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২ সেপ্টেম্বর ইউজিসি রমজান আলীর বিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে তথ্য প্রেরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। সেই মোতাবেক গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউজিসি’র কাছে বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিয়েছেন যে, ছাত্রীর অভিযোগটি মানসিক নির্যাতন। ছাত্রীর যৌন হয়রানি ও গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা গোপন করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাশেম ভুয়া শিক্ষা সফর সূচীর অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্ত্রীর নির্যাতনের মামলা থেকে বাঁচতে একই বিভাগের চেয়ারম্যান আবু সাঈদের কাছে শিক্ষা সফর সূচী পরিবর্তনের কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ প্রয়োগ প্রদান করেন অভিযুক্ত শিক্ষক রমজান আলী। রমজান আলীর শিক্ষা সফরটি ছিল ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু যেহেতু স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি তাই মামলা থেকে বাঁচতে একই বিভাগের চেয়ারম্যান আবু সাঈদের কাছে ব্যাক ডেটে নতুন একটি শিক্ষা সফর সূচীতে স্বাক্ষরের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু আবু সাঈদ স্বাক্ষর না করায় অভিযুক্ত শিক্ষক রমজান আলী ক্ষমতা পরিবর্তন হলে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। পরে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এ বিষয়ে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরেও ওই অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক রমজান আলীর ভুয়া শিক্ষা সফর সূচীর অনুমোদন দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাশেম। পরে এই সফর সূচী আদালতে জমা দেন রমজান আলী। বিষয়টি জানতে পেরে রমজান আলীর স্ত্রী ঘৃণায় মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন এবং রমজান আলীকে তালাকও দেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। এ ধরনের অকল্পনীয় মিথ্যাচার করা ও যৌন হয়রানিকারী শিক্ষককে বাঁচানোর অপচেষ্টার ঘটনায় উপাচার্য নৈতিকভাবে তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসিকে দেয়া চিঠি প্রত্যাহারের পাশাপাশি উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয় এবং এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কার, ইউজিসিকে দেয়া চিঠি প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বহিষ্কার করা না হলে দিনাজপুরের সকল নাগরিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ সময় দিনাজপুর সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম, উদীচীর সভাপতি রেজাউর রহমান রেজু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু, সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও নাট্যকার তারেকুজ্জামান তারেক, শেখ ছগির আহম্মেদ, রহমতুলাহ রহমত, মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি মাহবুবা খাতুন, মিনতি ঘোষ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা সানু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×