ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান আটক

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১ অক্টোবর ২০১৯

শাহজালালে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশে পালানোর সময় বিমান থেকে গ্রেফতার করা অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন বিদেশে পলাতক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সেলিম প্রধানের অফিসে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। অভিযানে বিদেশী মদ ও বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও নানা কিছু জব্দ হয়েছে। রাত একটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। অভিযান কখন শেষ হবে তা সুনির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে পারেনি র‌্যাব। সোমবার দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি ছাড়ার আগ মুহূর্তে সেলিম প্রধানকে বিমান থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় র‌্যাবের একটি টিম গুলশান-২ এর ১১/এ নম্বর সড়কের ৯৯ নম্বর বাড়িতে সেলিম প্রধানের অফিসটি ঘিরে ফেলে। রাত দশটার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ভবনটিতে অভিযান শুরু করেন। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত একটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জনকণ্ঠকে বলেন, সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং অভিযান চলছে একই সঙ্গে। অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান কখন শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাত একটা নাগাদ অভিযানে বাড়িটি থেকে বিদেশী মদ ও বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ হয়েছে। যদিও তিনি তার পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার জানান, সেলিম অনলাইন ক্যাসিনো জুয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি ক্যাসিনোর অর্জিত আয় বিদেশে পাচার করে আসছিলেন। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সেলিম প্রধান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ। তারেক রহমানের বিভিন্ন পার্টিতে তরুণী সরবরাহের কাজ করতেন তিনি। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লারে দেশী-বিদেশী নারী সরবরাহের সঙ্গেও তিনি জড়িত। বিশেষ করে যেসব স্পাতে ভিআইপিরা যাতায়াত করেন, সেখানে মেয়ে সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। ওইসব মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দিতেন। সিলেট থেকে অবৈধপথে পাথর সরানোর কাজ করত। এছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারেও সঙ্গেও তিনি জড়িত। র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচারক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, সেলিম প্রধানকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-১ অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি কারাবন্দী বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মোহামেডান ক্লাবের সভাপতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লোকমান ভুইয়ার ক্যাসিনো পার্টনার। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে সেলিম প্রধান বিমানবন্দরে যান। পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে তাকে বিশেষ প্রটোকল দিতে দেখা যায়। তিনি দ্রুত চেকইন কাউন্টারের প্রক্রিয়া শেষ করে ইমিগ্রেশনে চলে যান। যথারীতি তিনি ওই ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসে গিয়ে নিজের আসনে বসেন। সিডিউল মোতাবেক বেলা দেড়টায় ওই ফ্লাইট টেক অফ করার জন্য পুশকার্টও লাগানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে ফ্লাইটটি বে এরিয়া থেকে রানওয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় হঠাৎ ককপিটে জরুরী বার্তা পৌঁছে। যথারীতি ফ্লাইট হোল্ড করার পর র‌্যাবের সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যান। তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাবের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গ্রেফতারকৃত জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ক্যাসিনোর আরেক সংস্করণ অনলাইন ক্যাসিনোর তথ্য। সেলিম প্রধান ঢাকায় বসে দেশী-বিদেশী জুয়াড়িদের সঙ্গে সমন্বয় করে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করছিলেন। অভিজাত শ্রেণীর জুয়াড়িদের নিয়ে গত মার্চে তিনি এক আস্তানায় বসে প্রকাশ্যে বাংলাদেশে ক্যাসিনো বৈধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। অল্প দিনের মধ্যেই ক্যাসিনোকে বৈধ করে দিবেন বলেও সবাইকে আশ্বস্ত করেন। জানা গেছে, সেলিম এক সময় বাংলাদেশ জাপান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির বড় পদে আছেন বলে পরিচয় দিতেন। আর্থিক লগ্নি প্রতিষ্ঠানের নামে বড় ধরনের প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা সেলিম প্রধান এক সময় জাপান গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন একটি কারখানায়। সেখানে এক বৃদ্ধাকে বিয়ে করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। গঠন করেন জাপান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি। এই সংগঠনের আড়ালে তিনি জাপান থেকে বিনিয়োগ আনার কথা বলে ঢাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। বিএনপি জামায়াতের আমলে হাওয়া ভবনের গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। বিমানবন্দরে গিয়ে তিনি একবার ভিআইপি সুবিধা না পেয়ে এক নিরাপত্তাকর্তাকে হেনস্তা করেন। একই সময় লোকমান হোসেন ভুইয়ার সঙ্গেও তাকে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দেখা যেত। ওয়ানইলেভেনের সময় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের আমলে আবার নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সূত্র বলছে, জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ও লোকমান ভুইয়া গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই র‌্যাব জানতে পারে ঢাকায় অনলাইন ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা সম্পর্কে। গডফাদার হিসেবে সেলিম প্রধানের নাম উঠে আসে তদন্তে। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি পালিয়ে বিদেশ চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু র‌্যাবের কারণে শেষ রক্ষা হয়নি।
×