ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নান্দাইলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১ অক্টোবর ২০১৯

নান্দাইলে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ, ৩০ সেপ্টেম্বর ॥ উপজেলার পুরহরি গ্রামে নরসুন্দা শাখা নদীর ওপর কোন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। অথচ সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষে আর সে কথা মনে রাখেন না। তাই বাধ্য হয়েই নিজেদের তৈরি করা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হন ক্ষুদে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। সরজমিনে নরসুন্দা নদীর পাড়ে সাঁকোটির পাশে গিয়ে দেখা যায়, আমোদাবাদ, পুরহরি, চাঁনপুর, মেরাকোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে নান্দাইল পৌর সদরসহ আশপাশে চলাচল করেন। সাঁকো সংলগ্ন আমোদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। উপজেলা সদরে যাবার পাকা সড়কটিও বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশ দিয়ে চলে গেছে। বিদ্যালয়টির অনেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। যান চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় অসুস্থ মানুষকে উপজেলা শহরে নিয়ে আসতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বছরের বেশিরভাগ সময় নদীতে পানি থাকে। আর বর্ষাকালে ১৮ থেকে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত পানি হয়। তার ওপর তিব্র স্রোত। এর মধ্যে বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে। সাঁকোর পাশে রয়েছে একটি স্মৃতি ফলক। যেটি স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন ১৮ সালের ৩১ অক্টোবর মাসে ৪৫ মিঃ দীর্ঘ একটি আর সি সি সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু আজও তা নির্মাণ করা হয়নি। পুরহরি গ্রামের বাদল, মোস্তাফিজ ও ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে আসেন ভোট চাইতে। অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন আমাদের যাতায়াতের পথে সেতু নির্মাণ করে দেয়ার। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর গ্রামবাসীর খোঁজখবর নেন না।’ একই গ্রামের নাসিমা বেগম (৪০) জানান, একদিন তিনি তার মেয়ে রওজা আক্তার (৫) ও তুষার (৭) কে নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ বাঁশের বাঁধন খুলে তিনজনই পানিতে পড়ে যান। পরে নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় কয়েকজন তাদের উদ্ধার করেছে। খোকন মিয়া (৪৬) বলেন, তার পুত্র সিয়াম আমোদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্র। কিছুদিন পূর্বে বিদ্যালয়ে যাবার সময় সাঁকো থেকে নিচে পড়ে যায়। লোকজন দেখে ফেলায় প্রাণে বেঁচে গেছে সে। আমোদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী মারিয়া, লিজা ও ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী সাওদা জানায়, ‘সাঁকোটা পার হওয়ার সময় জানডা হাতে লইয়া পার হই, কখন যে নিচে পইড়া যাই আল্লাই জানেন’। সাঁকো সংলগ্ন আমোদাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল করিম খান বলেন, তার বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। প্রায় সময় সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যাওয়ার খবর আসে। তাই শিক্ষকরা আতঙ্কে থাকেন। ওই প্রধান শিক্ষক মনে করেন, শিশুদের কথা চিন্তা করে হলেও নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা উচিত। নান্দাইল উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিফতরের (এলজিইডি) প্রকৌশী আবুল খায়ের মিয়া বলেন, নরসুন্দা নদীর ওপর সেতুটির জন্য ইতোমধ্যে তিনবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।
×