ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্লিপারে স্লিপারে মৃত্যু ফাঁদ

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১ অক্টোবর ২০১৯

স্লিপারে স্লিপারে মৃত্যু ফাঁদ

সংবাদদাতা, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে ॥ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ত্রুটিপূর্ণ লাইন ব্যবহার করেই বছরের পর বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন সিলেট বিভাগের চারটি জেলার প্রায় কয়েক লাখ মানুষ। দীর্ঘ ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৩ সেতু। আর সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেই রেললাইন থেকে মাটি সরে গিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয় এ রেললাইনটি! বিভিন্ন সময় ধারাবাহিক দুর্ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই রেল কর্তৃপক্ষের। জানা গেছে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ১৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ১৩টি সেতুর ওপর ট্রেন পারাপারে ডেড স্টপ (সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, এরপর পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে) ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ডেড স্টপ-এর আওতাধীন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতুগুলো বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হয়েছে তবে সংস্কারের মান নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন উঠেছে। ১৭৬ কিলোমিটারের ঢাকা-সিলেট রেলপথটি সেই ব্রিটিশ আমলেই তৈরি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে ভৈরব পর্যন্ত ডাবল লাইন স্থাপন করা হলেও ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত লাইনটি রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। শতবছরের পুরনো এ সড়কটি মাঝে-মধ্যে নাম মাত্র সংস্কার করা হলেও অধিকাংশ স্থানের অবস্থাই অত্যন্ত নাজুক। নড়বড়ে প্রতিটি সেতুতে ট্রেন উঠলেই কাঁপতে শুরু করে বগি! প্রায়শই পাহাড়ী ঢলে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে আবার কখনও ব্রিজ ভেঙ্গে গিয়েও ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটে ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতের ঘটনা। ট্রেন লাইনচ্যুত কিংবা বিভিন্ন ত্রুটির কারণে দিনব্যাপী সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত তিন বছরে অন্তত ২০-২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-সিলেট রেলপথে। ক’দিন পর পর এই রুটে সিøপার লাইনচ্যুত হলেও দুর্ঘটনা কবলিত এসব স্থানগুলোতে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে ফের চালু করে দেয়া হয় হচ্ছে ট্রেন যোগাযোগ। রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা যায়, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেকগুলো সেতুই অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নং সেতু এবং মনতোলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু। সেতু সংস্কারের কোন প্রকল্প না থাকায় এগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। মনু স্টেশনের পাশের মনু ব্রিজের দূরাবস্থা নিয়ে ২০১৭ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়। মনু ব্রিজের সিøপারের নাট খুলে যাওয়া এবং কাঠের বদলে বাঁশ দিয়ে জোড়াতালি দিলে সিøপার বানিয়ে তখন রেলসেতুটি মেরামত করে কর্তৃপক্ষ। সেই মনু সেতুটি এখনও সেই অবস্থায়ই আছে এবং রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের তালিকায়ও সেই ব্রিজটি আছে। শ্রীমঙ্গল-সাতগাঁও স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ভইষমারা রেল সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল পাহাড়ী ঢলে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকেই ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা এলাকার ৫৬ নম্বর ব্রিজে গতবছরের ২৯ মার্চ বৃষ্টির পর মাটি সরে যায় এবং রেল যোগাযোগ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। তারপর থেকে ওই সেতুটিতে ডেড স্টপ দিয়েই চালানো হচ্ছে ট্রেন। স্থানীয়রা জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ৬টি আন্তঃনগর ও ২টি লোকাল ট্রেন অন্তত ১৫-১৬ বার যাতায়াত করে আর তাতে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এদিকে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আতাউল হক ভূইয়া জানান, সিলেট আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের রেলপথে কোথাও যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন তা দ্রুত মেরামত করা হয়।
×