ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমানে শুদ্ধি অভিযান

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১ অক্টোবর ২০১৯

বিমানে শুদ্ধি অভিযান

বাংলাদেশের বিমানের বহরে যখন সর্বশেষ ড্রিমলাইনার রাজহংস যুক্ত হয়, তখনই সম্পাদকীয় মন্তব্যে আমরা বলেছিলাম, বিমানকে শুধু বহরে বড় করলেই হবে না, লাভজনকও করে তুলতে হবে অবশ্যই। তা না হলে বর্তমান বিমানের ‘লাল বাতি’ কখনোই ‘নীল’ হয়ে জ্বলবে না। আশার কথা এই যে, দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশ বিমানে শেষ পর্যন্ত শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান কার্যক্রম। আগামী বছর কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে বিমান। অবশ্য এ স্থলে মাঠের পরিবর্তে আকাশে ওড়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতাই উপযুক্ত যথার্থ শব্দ। এর জন্য অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে যোগ্য, কর্মঠ ও আন্তরিক কর্মীদের বাছাই করে যথাযোগ্য পদে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগে গত মার্চে অপসারণ করা হয় বিমানের এমডিকে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিমানকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে লাভজনক করে তোলার মতো দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বসহ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বালাদেশ বিমানে নেই। টিকেট বিক্রির টাকা লোপাট থেকে শুরু করে সেবার মান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পাইলটের অদক্ষতা ও দুর্নীতি প্রায় সবই ওপেন সিক্রেট। এ অবস্থায় খোল-নলচে পাল্টে ফেলতে হবে বিমানের। ২০১৭-এর ৫ সেপ্টেম্বর ড্রিমলাইনার তথা আকাশবীণার প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে উড়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অপেক্ষাকৃত সুদূর গন্তব্যে ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে যাতায়াত সুগম ও সাশ্রয়ী হয়। সে অবস্থায় বাংলাদেশ বিমানের উচিত হবে নতুন করে ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের পাশাপাশি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা করা। রাজহংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬টিতে। তবে বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া দরকার অনতিবিলম্বে। এর পাশাপাশি বিমান এবং বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরী ও অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ বিমানের অনিয়ম-অব্যবস্থা-ঘুষ-দুর্নীতি-অদক্ষতা নিয়ে এমনিতেই অভিযোগের অন্ত নেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ বিমান পরিচালনায় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চৌকস ও অভিজ্ঞ পাইলটদের নিয়োগ দিয়েও তেমন সুফল মেলেনি। এমনকি বিদেশী পেশাদার প্রধান নির্বাহী নিয়োগেও আদৌ কোন ইতিবাচক উন্নতি হয়নি বিমানের। সংস্থাটির শক্তিশালী ইউনিয়ন ও অসাধু চক্র নিয়েও সময়ে সময়ে অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। কথায় কথায় বিমানের চাকা বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও আছে। সর্বোপরি আছে বছরওয়ারি অপরিমেয় লোকসানের বোঝা। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীসহ প্রতিপক্ষের হামলার অন্যতম টার্গেট। দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশ বিমানও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। রাষ্ট্রীয় কার্যোপলক্ষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যতবারই বাইরে গেছেন, প্রায় ততবারই প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ কোন না কোন অঘটন ধরা পড়েছে। প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটেই কেন বার বার এ রকম অনিয়ম-অঘটন, অপতৎপরতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ঘটনা ঘটবে? এর কি আদৌ কোন প্রতিকার নেই? সত্য বটে, প্রশাসনের স্তরে স্তরে স্বাধীনতাবিরোধী দুষ্টচক্র তথা জামায়াত-বিএনপি-জঙ্গী ইত্যাদি ঘাপটি মেরে আছে। বিমানও এর ব্যতিক্রম নয়। এদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে অবিলম্বে। এর পাশাপাশি সর্বতোভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে বাংলাদেশ বিমানকে।
×