ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কাম্য

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১ অক্টোবর ২০১৯

আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কাম্য

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যর সুষ্ঠু ও সমন্বিত সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে এটি খুব শীঘ্রই বিশেষ করে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তিনি। অবশ্য এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলা, যেমন নিরাপদ অভিবাসন, উদ্বাস্তু সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, এসডিজিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের অবস্থান ও করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন বিভিন্ন অধিবেশন, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ওআইসির মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। উল্লেখ্য, এসব স্থানেই প্রাধান্য পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রায় সর্বত্রই তাঁর আত্মবিশ্বাসী ও হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি আলোকচ্ছটা ছড়িয়েছে। এর পাশাপাশি এও সত্য যে, বর্তমানে তিন বছর অতিক্রান্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বিশেষ করে এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়টি আর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা প্রায় আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা উপস্থাপন করেছিলেন। এর ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনসহ দু’দুবার প্রত্যাবাসনের তারিখ চূড়ান্ত হলেও একজন রোহিঙ্গাও যেতে রাজি হয়নি মিয়ানমারে। এর জন্য প্রধানত দায়ী মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রভাবিত সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব। বাস্তবে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সেদেশের নাগরিকত্ব প্রদানসহ নিরাপত্তা, সর্বোপরি পুনর্বাসনের অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি প্রায় কিছুই করেনি। উপরন্তু নতুন করে রোহিঙ্গা উচ্ছেদসহ সামরিক দমন-পীড়নের খবরও মিলেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নতুন করে চার দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন, যা অবশ্যই আমলে নিতে হবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। তা না হলে বিপন্ন ও বিঘিœত হতে পারে আঞ্চলিক নিরাপত্তা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসি তথা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার ১৪তম সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষে ভাষণ দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরেন। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রাপ্ত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনে তিনি ওআইসির সহযোগিতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অচিরেই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে ওআইসি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা-সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব বা সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন। প্রথমত, মিয়ানমারকে অবশ্যই টেকসই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে সেদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত করার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের সুরক্ষাসহ নিরাপত্তা দিতে হবে। এবং চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতন-নিপীড়ন রোধে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহিসহ জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সুপারিশের আলোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আর তা হলেই কেবল সব রোহিঙ্গার নিরাপদে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত হবে মিয়ানমারে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্য-সহযোগিতা অবশ্যই কাম্য। ভারত, রাশিয়া ও চীনের সমর্থনও প্রত্যাশিত বৈকি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।
×