ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারী কাউন্সিলরদের উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্তের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নারী কাউন্সিলরদের  উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্তের পরিকল্পনা

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের নগর উন্নয়নে সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমে আরও সক্রিয় ও কার্যকর জনপ্রতিনিধি হিসেবে তৈরি করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় তাদের নাগরিক সেবা আরও বৃদ্ধি, চলমান কাজের ব্যাপ্তি নির্ধারণ ও নামমাত্র জনপ্রতিনিধি না রেখে কিভাবে এলাকার সব উন্নয়ন কর্মকা-ে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানো যায় সে পথ খুঁজতে সরকার এ পরিকল্পনা নিয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে বর্তমানে নারী কাউন্সিলরদের সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার উন্নয়নে কি কি দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয় ও নগর উন্নয়নে তাদের কিভাবে কাজে লাগানো হয় তা জানতে চায় মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণে কি করা যায় তা খুঁজতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মাহবুব হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তা যাচাই-বাছাই শেষে নারী কাউন্সিলরদের সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে গড়তে সরকারের করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচিত ৪ নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন ধরনের জনসম্পৃক্ততামূলক কাজে কোন সুযোগ দেয়া হয় না সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন দাবি মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। সূত্র জানায়, নারী কাউন্সিলরদের কাজের পরিধি বর্তমানের চেয়ে আরও বাড়ানো, নাগরিক সেবায় তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, শুধু নামমাত্র কাউন্সিলর হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সংযুক্ত না রেখে নগর উন্নয়নে তাদের সরাসরি দায়িত্ব প্রদান, পুরুষ কাউন্সিলরদের অবহেলা ও অবজ্ঞার চোখে দেখা, কাউন্সিলর কার্যালয় না থাকা, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট কাজ ভাগ করে দেয়া, পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো নারী কাউন্সিলরদেরও নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ বাজেট প্রদান, নাগরিক দুর্দশা লাঘবে সরাসরি প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদানের দাবি তুলে ধরা হয়। এছাড়া নাগরিকদের স্বার্থে নগর প্রধান হিসেবে মেয়রের সব কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা পালনের সুযোগ প্রদানসহ বর্তমানের চেয়ে আরও অধিক কার্যকর ভূমিকা থাকতে মন্ত্রীর সাহায্য কামনা করা হয়। একইসঙ্গে নামমাত্র কাউন্সিলরের অপবাদ থেকে পরিত্রাণ দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের আসল প্রতিনিধি করতে অফিস বা কার্যালয় স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী নারী কাউন্সিলরদের সব দাবির প্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নে করণীয়, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় নির্বাচিত সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের কি কি দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে, স্থানীয় সরকার আইনে অনুযায়ী তাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে কি না, তাদের দাবিসমূহ পূরণে সরকারের সীমাবদ্ধতা ও করণীয় রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়। সূত্র জানায়, তাদের বর্তমান দায়িত্ব যথাযথ কি না বা দায়িত্ব পালনে পুরুষ কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সমন্বয় করে এলাকার উন্নয়নে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এসব বিষয়সহ কিভাবে নারী কাউন্সিলরদের কর্মকা- আরও সক্রিয় ও কার্যকর করা যায় তা বের করতে কাজ করছে। কমিটি নারী কাউন্সিলরদের আরও কার্যকর জনপ্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় সরকার আইনের কতটুকু ব্যবহার করছে, আইন মেনে তাদের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা ক্ষমতা প্রদান সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বা পৌর মেয়ররা দিচ্ছেন কি না, না দিলে কোন কোন স্থানে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে কাজ করবে। জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে নাগরিক সেবায় কাজ করার তেমন পার্থক্য নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতি কাউন্সিলরই এলাকার উন্নয়নে বাজেট প্রণয়ন, পর্যালোচনা, উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, এলাকাভিত্তিক নাগরিকদের দুর্দশা লাঘবে ও উন্নয়ন কর্মকা- সম্পাদনে কি কি করণীয় তার চাহিদাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ ও তা মেয়রের কাছে লিখিত আকারে প্রস্তাব প্রণয়ন করতে কমিটিকে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সব কাউন্সিলরই মেয়রের কাছে প্রকল্প পরিকল্পনা জমা দেবেন। মেয়র কাউন্সিল মিটিংয়ে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্তের জন্য সব নির্বাচিত কাউন্সিলরের সঙ্গে মতামত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সমস্যা থাকলে সে পলিসি নির্ধারণ করবেন। আর এসব পলিসি গ্রহণের পর তা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের। কিন্তু নিয়মানুযায়ী কোন কাজ না হওয়ায় বেশ কিছু প্রকল্প নিজস্ব যোগ্যতা বলে পুরুষ কাউন্সিলররা বাগিয়ে নিতে সক্ষম হলেও নারী কাউন্সিলররা তা করতে পারেন না। তাছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলরদের কার্যালয় না থাকায় জনসম্পৃক্ততাও তেমন একটা গড়ে ওঠে না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নামমাত্র কাউন্সিলর হিসেবেই চুপচাপ দিন কাটিয়ে দিতে হয়। অপরদিকে নারী কাউন্সিলররা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ কাউন্সিলরদের এলাকার নানা অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনসহ কোন কাজেই পাশে রাখেন না বলে নারী কাউন্সিলরদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবায় সমান ভূমিকা রাখতে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেতে তারা মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় সরাসরি জনগণের ভোটে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে সাধারণ কাউন্সিলদের মতো সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জনসম্পৃক্ত কাজে শরিক করা হয় না বা উন্নয়নমূলক কাজে তাদের মতামত গ্রহণযোগ্য হয় না বলে নারী কাউন্সিলররা অভিযোগ করেন। নারী কাউন্সিলররাও সত্যিকারের জনপ্রনিধিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তার জন্য সরকারের কাছে নানা দাবি জানিয়ে আসছে।
×