ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবল চাপের মুখে অবশেষে সুর নরম করেছে মিয়ানমার। শনিবার দেশটি জানিয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সুবিধাজনক উপায়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া হবে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিল আউং সান সুচির অধীনস্ত মন্ত্রী কিয়া টিন্ট শোয়ে বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের পূর্বের বাসভূমিতে আবার ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনা হলেও তারা কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। খবর এবিসি নিউজের। কিয়া টিন্ট শোয়ে শনিবার জাতিসংঘে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে এবং এই বিষয়ের দীর্ঘ মেয়াদী ও বাস্তব সমাধান খোঁজা হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় সাত লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিয়ানমারও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই এখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব হবে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে আনা ও তাদের বসবাসের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। তবে ক্যাম্পে কোন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সুচির মন্ত্রী কিয়া টিন্ট শোয়ে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। মিয়ানমারের পুলিশ সদস্যদের ওপর রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেশটির সেনা সদস্যরা এসব হামলা শুরু করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনাকে জাতিগত নিধনের চেষ্টা বলে আখ্যা দেয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন চেষ্টার হাত থেকে রেহাই পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্তের কাছের বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। গতবছর জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে মিয়ানামারের সেনা কমান্ডারদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। দীর্ঘ কয়েক দশক মিয়ানমার সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। চার বছর আগে দেশটিতে বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে। শোয়ে বলেন, একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থা থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানামারে ফেরাতে দেশটি কয়েক দফা চেষ্টা করলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরেনি। কিয়া টিন্ট শোয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পথ খুঁজতে মিয়ানমার তার প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তরিকতা ও হৃদ্যতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক উপায়ে অবশ্যই কাজ করবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ‘নিরাপদ এলাকা’ গঠনের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। তবে এই ধরনের দাবি বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিয়া টিন্ট শোয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে নাগরিকত্ব কার্ড অথবা যারা নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হবে- তাদের গ্রিনকার্ড ধাঁচের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেয়া হবে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর কারণ মিয়ানমার মনে করে সকল রোহিঙ্গাই মিয়ানমারের নাগরিক নয়। এদের মধ্যে অনেকে অন্য জায়গা থেকে এসেছে। কিয়া টিন্ট শোয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তথ্য রয়েছে তাদের বিচারে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের মাধ্যমে করার বৈশ্বিক চাপ প্রত্যাখ্যান করেন। কিয়া টিন্ট শোয়ের বক্তব্যের আগেরদিন শুক্রবার জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে চারটি প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
×