ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরব নদকে ছোট করে ফেলেছে

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যশোরে ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরব নদকে ছোট করে ফেলেছে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদ যেখানে ১৫০ মিটার চওড়া, সেখানে ব্রিজ করা হয়েছে মাত্র ২০ মিটার। এতে নদের স্রোত বাধাগ্রস্থ হয়ে নদ মরে যাচ্ছে। এখন ভৈরব নদের খনন চলছে, তাই নদের স্রোত স্বাভাবিক রাখতে ৫১টি ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে। যশোরের প্রধান নদী হিসেবে পরিচিত ভৈরব। অথচ এর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। দখল আর দূষণে নদীর জীবন নেই বললেই চলে। সেই সাথে ৫১টি ব্রিজ-কালভাট নদীকে ছোট করে ফেলেছে। এসব ব্রিজ-কালভার্ট চিহিৃত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেঙ্গে ফেলার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে অপরিকল্পিত এসব ব্রিজ-কালভার্ট নদীর গতিপথ কমিয়ে দেবার পাশাপাশি প্রশস্ত করে ফেলেছে। এখন ভৈরব খননকাজ চলছে। এতেও বাঁধা সৃষ্টি করছে অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব নদের গতিপথ টেনে ধরেছে অপরিকল্পিতভাবে করা ৫১টি ব্রিজ-কালভার্ট। এর মধ্যে যশোর সদরে ৩৪টি, চৌগাছা উপজেলায় ১৬টি এবং ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার গৌরিনাথপুর ব্রিজ রয়েছে। এসব ব্রিজ-কালভার্টের কারণে নদীর প্রশস্ততা কমার পাশাপশি এর গতিপথও শ্লথ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে সমানতালে চলেছে দখল আর দূষণ। শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় ৮০ দশকে গড়ে তোলা হয় ব্রিজ। মাত্র ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থ ব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অথচ ভৈরব নদের দৈর্ঘ্য শহরে ১৫০ মিটার ও শহরের বাইরে ৩শ’ মিটার রয়েছে। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা সদরের রাজারহাট কচুয়া ব্রিজের। মাত্র ১২ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৩ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থ এটি। ব্রিজটিতে একটি ছোট গাড়ি চললে অপর পাশ দিয়ে রিক্সা পর্যন্ত চলাচল করতে পারেনা বলে জানান, রাজারহাটের বাসিন্দা আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ওই ব্রিজটির কারণে নদীর প্রশস্ততা যেমন কমেছে তেমনি দখলও করা হয়েছে। ওই দু’টি ব্রিজের মতো একই অবস্থা সদরের ঘোপ ব্রিজ, মাশলিয়া, ঝনঝনিয়া, ঝনঝনিয়া সমসপুর, মথুরাপুর, মানিকদিহি, হৈবতপুর, রেলওয়ে, খোজারহাট, শানতলা, খয়েরতলা, বিরামপুর, বাবলাতলা, কাঠেরপুল, ঢাকারোড, ঝুমঝুমপুর লিচুতলা, নীলগঞ্জ, রুপদিয়া, ভগবতিতলা, মাথাভাঙ্গা, বসুন্দিয়া ব্রিজের। কালভার্টগুলো আরও অপ্রশস্ত। বর্তমানে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়েছে। যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে নওয়াপাড়ার আফরাঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদ খনন ও যশোর শহর এলাকায় নদের দুই পাড়ের ১০ কিলোমিটার হাটার রাস্তা নির্মাণ এবং সৌন্দয্যবর্ধন করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও নদী গবেষক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, ভৈরব নদের প্রস্থ ২৫০-৩০০ ফুট পর্যন্ত ছিল। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ব্রিজ-কালভার্টেল কারণে পলি জমে ও দখলে বর্তমানে নদের প্রস্থ স্থানভেদে ১০০-১২০ ফুট পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। যশোর শহরের অংশে আরও কমেছে ভৈরব নদের প্রস্থ। পানি প্রবাহের অভাবে নদটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার নদ খননের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প সুষ্টভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, আমরা ৫১ট অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট চিহিৃত করেছি। এসব ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরবকে ছোট করে ফেলেছে। নদের দৈর্ঘ্য শহরে ১৫০ মিটার এবং উপজেলায় ৩শ মিটার রয়েছে। কিন্তু ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে ১২ থেকে ৭০ মিটার। এতে নদীর গতিপথ যেমন কমেছে তেমনি দখল ও দূষণ চলেছে সমানতালে। এখন আমাদের খননকাজেও বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এসব অপিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট। যেকারণে আমরা মন্ত্রণালয়ে এগুলো ভেঙ্গে নতুন করে করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উজান ও ভাটিতে নদের প্রস্থ ২০০-৩০০ফুট হলেও শহরের অংশে এসে ১০০-১২০ ফুটের বেশি নেই। ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ জানান, মূলত অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট ভৈরবকে ছেঅট করে ফেলেছে। এতে নদের গতিপথ থেমে গেছে। ৮০ দশকে খুলনা থেকে শহরে সরাসরি বড় কার্গো জাহাজে পন্য পরিবহন হতো। এখন সেখানে পায়ে হেটে চলা যায়। এই সুযোগে দখলদাররা সহজে নদের জায়গা দখল করেছে।
×