ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রানীর মুকুটে আরেকটি পালক

প্রকাশিত: ১২:১৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রানীর মুকুটে আরেকটি পালক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এখনও আমি দাবা খেলাকে শুরুর দিনগুলোর মতো সমান উপভোগ করি। এ জন্যই সাফল্য আসছে।। খেলা শুরুর সময় সাধারণ একজন গৃহিণী ছিলাম। তবে দাবা চর্চা ছিল আগে থেকেই। ভাল লাগতো বলেই খেলতাম। এখনও ভাল লাগে বলেই খেলে যাচ্ছি। বর্তমানে যা কিছু পাচ্ছি এটা অতিরিক্ত হিসেবেই পাচ্ছি বলে মনে করি। সবচেয়ে বড় কথা মনের খোরাক, আনন্দ থেকেই অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি প্রতিযোগিতায়। আর কতদিন খেলবন? রানী হামিদ বলেন, যতদিন উপভোগ করব ততদিন খেলা চালিয়ে যাব। তার কথায়, অন্য সবকিছুতেই ক্লান্তি আসে। কিন্তু দাবা খেলায় আমার কোন ক্লান্তি নেই। যতদিন শরীর মন টানবে খেলে যাব। তবে এ কথা সত্যি নতুন কেউ ওঠে আসছে না বলেই এখনও আগ্রহ বা উৎসাহ পাচ্ছি। জয়ও পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। যেমন আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম গত শুক্রবার জাতীয় পর্যায়ের আসরে। উল্লেখ্য, জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয় গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের দাবা কক্ষে। এখানেই আলাপচারিতায় ‘দাবার রানী’ রানী হামিদ জানান তার সাফল্যের গল্প। চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আনসারের আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ ২৫ হাজার টাকা, ট্রফি ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ওয়ালটন সামগ্রী পুরস্কার লাভ করেন। বয়স ৭৬ বছর গড়িয়ে গেছে। অথচ মেধার খেলা দাবার বোর্ডে এখনও অপ্রতিরোধ্য রানী হামিদ। এদিন জিতলেন তিনি জাতীয় দাবায় ক্যারিয়ারের বিশতম শিরোপা। সাফল্য ধরে রাখতে শেষ রাউন্ডে রানী হামিদ পরাজিত করেন মানিকগঞ্জের মহিলা ফিদে মাস্টার নাজরানা খান ইভাকে। এই জয়েই আবারও বাজিমাত, শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণœœ রাখেন ৯ খেলায় সাড়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে। শিরোপা ধরে রাখতে শেষ রাউন্ডে দরকার ছিল জয়। সেই জয় তুলে নিয়ে ৩৯তম জাতীয় মহিলা দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। জাতীয় নারী দাবায় এটি তার ২০তম শিরোপা। ৮ পয়েন্ট নিয়ে জনতা ব্যাংক অফিসার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার শারমিন সুলতানা শিরিন হয়েছেন রানার্সআপ। সেরার পুরস্কার হাতে নেয়ার পর রানী হামিদ আবারও বললেন, আমি খেলার আনন্দে খেলে থাকি। চার দশক ধরে দাবার নিয়মিত মহাতারকা রানী হামিদ। বাংলাদেশের মহিলা দাবা মানেই রানী হামিদ। নিজেও ভাবেননি এতদিন খেলা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু মনের খোরাক, দাবার প্রতি ভালবাসা থেকে খেলে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। শোকেসে তুলছেন একের পর এক সাফল্য। তার লক্ষ্য এখন গিনেস বুকে নাম লেখানো। ১৯৭৭ সালে ঢাকায় মেয়েদের দাবা শুরু হয়। আমি তখন গৃহিণী। অথচ খেলায় চলে এলাম। এরপর ১৯৭৯ সালে প্রথম নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে খেলে প্রথম ছয়বার টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। জাতীয় মিটে ২০ শিরোপা বোধ হয় বিশ্ব রেকর্ড। আমি আসলে নিশ্চিত না। ৭৬ বছর বয়সে একজন চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেছে। তাকে সরিয়ে ৭৭ বছর বয়সে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে চাই। তাই আগামী বছরটাও খেলার আশা রাখি। প্রসঙ্গত রানার্সআপ শারমিন সুলতানা শিরিন ১৮ হাজার টাকা, ট্রফি ও ওয়ালটন সামগ্রী, তৃতীয় এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির আহমেদ ওয়ালিজা ১৩ হাজার টাকা, ট্রফি ও ওয়ালটন সামগ্রী, চতুর্থ মানিকগঞ্জের মহিলা ফিদে মাস্টার নজারানা খান ইভা ৮ হাজার টাকা, মেডেল ও ওয়ালটন সামগ্রী, পঞ্চম এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির মহিলা ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম ৭ হাজার টাকা, মেডেল ও ওয়ালটন সামগ্রী, ষষ্ঠ মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার সামিহা শারমিন সিম্মি ৫ হাজার টাকা, মেডেল ও ওয়ালটন সামগ্রী, সপ্তম হতে চতুর্দশ স্থানপ্রাপ্ত এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির তাসনিয়া তারান্নুম অর্পা, বগুড়ার উম্মে তাসলিমা প্রতিভা তালুকদার, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির ওয়াদিফা আহমেদ, ইশরাত জাহান দিবা বরিশালের আফরিন জাহান মুনিয়া, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির ক্যান্ডিডেট মাস্টার জান্নাতুল ফেরদৌস, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির ইশরাত জাহান আলো এবং ঢাকা বিভাগের কাজী জারিন তাসনিম প্রত্যেকে তিন হাজার করে টাকা, মেডেল ও ওয়ালটন সামগ্রী পুরস্কার দেয়া হয়।
×