ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ কী অবাক কান্ড সেই একই তারিখে, সেই একই আসরে, সেই একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেই একই ফল- জয়। বিষয়টি যেমন মজার তেমনি কাকতালীয়ও বটে। আবারও সেই ২৭ সেপ্টেম্বরেই সাফ অনুর্ধ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ এবং তাতে যথারীতি জয়ী লাল-সবুজের প্রতিনিধিরাই। শুক্রবার নেপালের কাঠমান্ডুর এপিএফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ‘হালি গোল’ (৪-০) উপহার দিয়ে ফাইনালে নাম লেখালো বাংলাদেশ। এই আসরে এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠলো তারা। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত, যারা শুক্রবার একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় সেমির ম্যাচে ৪-০ গোলে হারায় মালদ্বীপকে। ২০১৭ সালে এই আসরেই লীগপর্বের ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেদিনও ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। এছাড়া ২০১৫ আসরে ২২ আগস্ট গ্রুপপর্বেও লাল-সবুজরা জয় কুড়িয়ে নিয়েছিল ২-০ গোলে। শুক্রবারের জয়ের মাধ্যমে ভুটানের বিরুদ্ধে খেলা প্রতিটি ম্যাচেই শতভাগ জয়ের রেকর্ডের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন গোল হজম না করার কৃতিত্বও ধরে রাখলো বাংলাদেশ। শুক্রবার ভুটানকে গোলবন্যায় ভাসানো ম্যাচের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের যুব ফুটবলারদের কাছে। দুই উইং ব্যবহার করে বারবার আক্রমণ শানায় ভুটানের রক্ষণভাগে। ম্যাচের ১৬ মিনিটে গোলের ‘হালখাতা’ খোলে বাংলাদেশ। লম্বা একটি থ্রোতে মাথা ছুঁইয়ে বল জালের ঠিকানায় পৌঁছে দেন তানবীর হোসেন (১-০)। এরপর ২৭ মিনিটে একটি কাউন্টার এ্যাটাক থেকে থ্রু বল পেয়ে সহজেই প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম (২-০)। এরপর পাঁচ মিনিট পর আবারও গোল পায় বাংলাদেশের যুবারা। মাঝমাঠের একটু সামনে থেকে বল নিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের দারুণ জোরালো এক শটে গোল করে স্কোরলাইন ৩-০ করেন মিরাজ হোসেন। এই ব্যবধানেই এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রাধান্য ধরে রাখে বাংলাদেশের যুবারা। তবে স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা ও ভুটানের গোলরক্ষকের অসাধারণ কিছু সেভের ফলে গোলের দেখা পাচ্ছিল না লাল-সবুজরা। যখন মনে হচ্ছিল এই স্কোরলাইনে বাংলাদেশ জিততে যাচ্ছে তখনই অন্তিম মুহূর্তে ভেল্কি দেখায় তারা। বদলি নামা দীপক রায় বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে ভুটানের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন। ফলে ৪-০ গোলের বড় জয় নিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের ব্রিটিশ কোচ এ্যান্ড্রু পিটার টার্নার বলেন, ‘গোলমুখে আমাদের ফিনিশিং ভাল হয়েছে। দল ভাল খেলেছে। সুশৃঙ্খলভাবে খেলেছে ছেলেরা। এখন আমরা ফাইনালে উঠেছি। কিছুটা ক্লান্তির কারণেই হয়তো দ্বিতীয়ার্ধে গোল বেশি হয়নি।’ দলের এই পারফর্মেন্স ফাইনালেও দেখতে চান অধিনায়ক ইয়াছিন আরাফাত, ‘আজ সবাই ভাল খেলেছে। কোচের নির্দেশনায় সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। এমন পারফর্মেন্স ধরে রাখতে চাই। ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য আমাদের।’ ভুটানের বিপক্ষে প্রথম গোল করা তানবীর বলেন, ‘এই ম্যাচে গোল করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। ফাইনালেও গোল পেতে চাই, যেন দল জিততে পারে।’ শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরতে দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন মোহাম্মদ হৃদয়, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে ফাইনালে উঠেছি। এখন ট্রফি জিততে চাই। সবাই দোয়া চাইবেন যেন শিরোপা জিতে দেশে ফিরতে পারি।’ ২০১৫ সালে নেপালে বসেছিল সাফ অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসর। সেবার সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু এএফসির টুর্নামেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করতেই ২০১৭ সালে অনুর্ধ-১৯ টুর্নামেন্টটি হয়ে যায় অনুর্ধ-১৮। ভুটানে অনুষ্ঠিত পাঁচ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালের কাছে হেরে রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরে বাংলাদেশ। দু’বছর বাদে অনুষ্ঠিতব্য এবারের টুর্নামেন্টে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ছয় দেশ অংশ নেয়। নাম প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। চলতি আসরে গ্রুপ ‘এ’তে ছিল নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ। গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। ‘এ’ গ্রুপে ভুটান ৩-০ গোলে নেপালকে হারায় ও মালদ্বীপের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে যায়। অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে হারায় শ্রীলঙ্কাকে। এরপর ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে যায়। এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ঘরের মাটিতে প্রায় তিন সপ্তাহ অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। দলে ডাক পাওয়া বেশিরভাগ খেলোয়াড় প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এখন দেখার বিষয়, দুই বছর আগের ফাইনালে হারের ব্যর্থতা কাটিয়ে এবারের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার মধুর স্বাদ পায় কি না বাংলাদেশ।
×