ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। প্রকৃতি যেন এখানে তৈরি করেছে নজরকাড়া হাজারও চিত্র। চার পাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নিচে রয়েছে সবুজ বনরাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সড়ক। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা নদ-নদী ও ঝর্ণাধারা। খাগড়াছড়ির সর্বোচ চূড়া আলুটিলা। যার উচ্চতা সমতল থেকে প্রায় ১হাজার ফুট উপরে। আলুটিলার পার্বত্য চূড়া পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ৬ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য সত্যিই উপভোগ করার মতো। আলুটিলায় রয়েছে রহস্যময় এক সড়ঙ্গ। প্রায় সাড়ে তিনশ’ ফুট নিচে পাহাড়ের তলদেশে এ সুড়ঙ্গের দীর্ঘ প্রায় ৩০ ফুট। প্রতিদিন পর্যটকরা এই রহস্যময় সুড়ঙ্গ দেখতে আসেন। অন্ধকার সুড়ঙ্গে মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করতে হয়। খাগড়াছড়ির হৃদয় মেম্বার পাড়ায় রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা ‘রিছাই ঝর্ণা’। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ঝর্ণাটি দেশের অন্যতম। রিছাং ঝর্না দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড় জমে। মহালছড়ির মাইচছড়িতে পাহড়ের প্রায় ১৩০০ ফুট চূড়ায় রয়েছে দেবতা পুকুর (ত্রিপুরা ভাষায় যা মাতাই পুখরী) নামে পরিচিত। চারদিকে মালভূমি দ্বারা পাহাড় বেষ্টিত হওয়ায় দেবতা পুকুরকে সমতল ভূমিতে মনে হয়। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ পুকুরের পানি কখনও কমে না। খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত শহর রামগড়। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখায় ফেনী নদী। বাংলাদেশ রাইফেলস অর্থাৎ বিডিআরের ‘জন্ম স্থান’ এখানে। রয়েছে কৃত্রিম লেক ও ঝুলন্ত সেতু। মানিকছড়িতে রয়েছে মার্মা চিফের প্রায় তিনশ’ বছরের প্রাচীন রাজবাড়ী ও জেলা পরিষদ হটিক্যালচার পার্ক। এতসব রহস্যময় সৌন্দর্য দেখলে মনে হবে এ যেন এক রূপ গল্পের স্বপ্নপুরী। যেখানে দৈত্যরা রাজ কুমারীকে ঘুমপাড়াতো সোনা আর রুপার কাঠি দিয়ে। তাছাড়া যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, পাহাড়ের বুকভেদ করে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ। তা দেখতে হলে আসতে হবে খাগড়াছড়িতে। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় অহংকার শহরের প্রবেশ পথ আলুটিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত এ আলুটিলা। প্রায় হাজার ফুট উঁচু এ ভূ-নন্দন বিন্দুটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটন স্পট। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, বিশ্রামের জন্য পাকা ছাউনি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ইত্যাদি করা হয়েছে। এ টিলার মাথায় দাঁড়ালে শহরের ছোট/খাট ভবন, বৃক্ষ শোভিত পাহাড়, চেঙ্গী নদীর প্রবাহ ও আকাশের আল্পনা মনকে অপার্থিব মুগ্ধতায় ভরে তোলে। চোখে পড়ে আঁকা বাঁকা উঁচু নিচু ঢেউতোলা সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে ইটের রাস্তা। পাহাড়ী জুমিয়াদের ছোট ছোট মাচার তৈরি জুমঘর। আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি চমৎকার ডাকবাংলোও রয়েছে এখানে। প্রাকৃতিক নৈসর্গের এ স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে এখানে ইকো-পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আলুটিলার সুড়ঙ্গ বা রহস্যময় গুহা গা ছম ছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ী সুড়ঙ্গ পথ বেয়ে পাতালে নেমে যাওয়া কল্পনার হলেও আলুটিলার সুরঙ্গ কল্পনার কিছু নয়। পাহাড়ের পাদদেশ বেয়ে গুহার মুখ পর্যন্ত যেতে দর্শনার্থীদের এক সময় খুব কষ্ট হলেও এখন সেখানে পাকা সিঁড়ি করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমেই সেই স্বপ্নীল গুহামুখ। আলুটিলা সুরঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮২ফুট। জমকালো অন্ধকার এ গুহায় আগুনের মশাল নিয়ে ঢুকতে হয় কিছুটা সাহস নিয়েই। গুহায় আলো আঁধারীর মাখামাখিতে এক অপরূপ দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। ভেতরে অবিরাম ঝিরঝির বাদুর ঝুলে থাকা শির শির ছন্দে ছুটছে হিম শীতল ঝরনার স্বচ্ছ পানি। অনবদ্য রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গের ভেতরটা দেখলে অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে মন হতবাক হয়ে যায়। মনে হয় যেন নিখুঁতভাবে ছেনি দিয়ে পাহাড় কেটে কয়েক হাজার দক্ষ কারিগর এ গুহাটি তৈরি করেছে। দেবতার পুকুর জেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কি.মি. দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেঁষে অবস্থিত মাইচছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বত শ্রেণী হতে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ি নদীর ক্ষীণ ¯্রােতের মাঝে রয়েছে প্রকান্ড পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর মোহিত করে, প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হয় মন। সমুদ্র সমতল হতে ৭০০ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় দেবতার পুকুর রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতো সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার। পাঁচ একর আয়তনের এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মনোভোলা প্রাশান্তি মুহূর্তের মাঝে পর্যটকদের হৃদয় মন উদাস করে দেয়। পুকুরের চতুর্দিকে ঘন বন, যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে। কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জল তৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নর নারী পুণ্য লাভের আশায় পুকুর পরিদর্শনে আসে। ভগবান টিলা জেলার মাটিরাংগা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত ভগবান টিলা। জেলা সদর থেকে এর কৌণিক দুরত্ব আনুমানিক ৮৫ কি.মি. উত্তর-পশ্চিমে। ঘন সবুজের ভিতর আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যতই এগিয়ে যাওয়া যায় পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গ সকলকে বিমোহিত করে। এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলা সম্পর্কে কথিত আছে, এত উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলে স্বয়ং স্রষ্টাও ডাক শুনতে পাবেন। প্রাচীন লোকজন এ টিলাকে ‘ভগবান টিলা’ নামকরণ করেছিলেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবির একটি আউট পোস্টও আছে এখানে। সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে দাঁড়ালে মনে হয়, আপন অস্তিত্ব শূন্যের সীমানায় হারিয়ে গেছে। ঘন সবুজ বাঁশের ঝোপ, নাম-না জানা পাখির ডাক, পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার কলকল শব্দ-সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য লীলাভূমি। দুই ও তিন টিলা প্রকৃতির এক অপূর্ব বিস্ময় এই দুই টিলা ও তিন টিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৪২ কি.মি. দূরে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-মারিশ্যা রাস্তার কোল ঘেঁষে এই টিলায় দাঁড়ালে ভূগোল বিধৃত গোলাকৃতি পৃথিবীর এক চমৎকার নমুনা উপভোগ করা যায়। পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত সবুজের সমারোহ এখানেই সমষ্টি বেঁধেছে। এই টিলার অচেনা দৃশ্য যেন ক্যানভাসের ওপর কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়। আলুটিলার রিছাং ঝর্ণা (মারমা ভাষা) জেলা সদর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে সামান্য পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তরে ঝর্ণা স্থলের দুরত্ব সর্বসাকল্যে প্রায় ১১ কি.মি. ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। এটি রিছাং ঝর্ণা নামে পরিচিত। দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নামহীন রঙিন বুনো ফুল-এসব নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহ-মন ভরে ওঠে। হাজার ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মতো অবিরাম প্রবহমান। বিজিবির জন্মস্থান খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাচীন সীমান্ত শহর রামগড়। এ রামগড় শহরেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সে জন্য রামগড়কে বিজিবির জম¥ভূমি বলা হয়। বহু স্মৃতি বিজড়িত এ সীমান্ত শহর এবং স্মৃতিস্তম্ভ, বাংলাদেশ ও ভারত বিভক্তকারী ফেনী নদীর দৃশ্যাবলী খুবই মনমুগ্ধকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে উপজেলা পরিষদের সামনে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন স্পট। রাংগামাটির আদলে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কৃত্রিম লেক, দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ব শহীদ মিনার সব কিছু মিলিয়ে হঠাৎ রামগড়কে ইউরোপের কোন একটি সিটির মতো মনে হয়। সীমান্তবর্তী চা বাগান খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সীমান্তের গা ঘেষে খাগড়াছড়ি- ফেনী সড়কের দু-ধারে গড়ে উঠেছে বিশাল চা বাগান। যা খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্পকে করেছে স্বয়ং সম্পূর্ণ। খাগড়াছড়ি জেলায় আসা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সদা প্রস্তুত। বিশাল এলাকাজুড়ে এই চা বাগানে এলে পর্যটকরা বুঝতেই পারবে না তারা সিলেটে না খাগড়াছড়িতে আছে। মানিকছড়ির রাজবাড়ী জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মানিকছড়ি মংসার্কেল চীফ (মংরাজা) এর রাজবাড়ী এবং রাজত্বকালীন স্থাপত্য। রাজার সিংহাসন, মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক স্মৃতি বিজড়িত রাজবাড়ী। রাজবাড়ী এবং তৎকালীন রাজার স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। মংরাজার উত্তরাধিকার সূত্র নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ ও জটিলতার কারণে রাজবাড়ীটি আজ চরম অবহেলিত। পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র তিন কি.মি. পূর্বেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। সবুজের অফুরন্ত সমারোহ আর স্বপ্নীল আবেশে যদি নিজেকে ভূলতে চাইলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রই আদর্শ স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি এ কেন্দ্রটি। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে শুধু সবুজের স্নিগ্ধতা মন্থনের আশায়। শতায়ু বটগাছ মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্যের কোন উপাদান। পাঁচ একরের অধিক জমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। মূল বটগাছ থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এ একটি নতুন বটবৃক্ষের পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, ঝুড়ি মূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সঙ্গে সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। কথিত আছে, এ বটবৃক্ষের নিচে বসে শীতল বাতাস গায়ে লাগালে মানুষও শতবর্ষী হয়। ঠান্ডা ছড়া খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণার উল্টো দিকে খাগড়াছড়ি আদর্শ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ৫ মিনিট হেঁটে গেলে দেখা যাবে একটি পাহাড়ী ছোট নদী। হাঁটু পানির এই নদী ধরে পূর্ব দিকে আরও ৫ মিনিট হাঁটলে হাতের ডান দিকে পাহাড় থেকে আসা ছোট ছড়াটিকে দেখতে অনেকটা ড্রেনের মতো মনে হয়। দুই দিকে পাহাড় মাঝখানে ছিকন ছড়া, উপরে নানা জাতের গাছের ছাউনি সব মিলিয়ে একটি সুড়ঙ্গ পথের মতো। ধীর গতিতে পা টিপে টিপে ছড়ার ভিতর ঢুকতে হবে। ছড়ার শেষ মাথায় পৌঁছতে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা লাগবে। পুরো ছড়াটি দেখতে হলে সকালেই এই স্পটটিতে পৌঁছতে হবে এবং সঙ্গে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিতে হবে। ছড়াটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো গরমের দিনে এর পানি ফ্রিজের মতো ঠান্ডা থাকে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে ঠান্ডা ছড়া। দীঘিনালা শিবছড়ি পাহাড় সৌন্দর্যের আরেক নাম শিবছড়ি পাহাড়। এটি দীঘিনালা থেকে প্রায় ১৬ কি.মি. দূরে দেওয়ানপাড়া নামক এলাকায় অবস্থিত। ছড়া, নালা, গভীর অরণ্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ী ঝর্না ও সৈান্দর্যম-িত বিভিন্ন পাথরের স্তূপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। তাছাড়া শিবছড়ি পাহাড়ের ৩ কি.মি. দূরে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ১১ হাত লম্বা ৩৯ হাত চওড়া দুটি স্বল্প আকৃতির কৃষ্ণের শীলা আসন। হাতির মাথা আকৃতির পাহাড় প্রকৃতির আরও এক রহস্য হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া গ্রামে অবস্থিত পাহাড়টিকে দেখতে হাতির মাথার মতো মনে হয়। কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় পার হয়ে ৩০/৩৫ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়টিকে দেখতে হয় লোহার সিঁড়ি বেয়ে। এই সিঁড়িতে ওঠা মানে হাতির শুরের উপরে ওঠা আর সামনে চলা মানে শুর বেয়ে হাতির মাথায় অর্থাৎ পাহাড়ের মাথায় ওঠা। পাহাড়ে ওঠার পর দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। পানছড়ি অরণ্য কুঠির জেলার পানছড়ি উপজেলায় নির্মিত হয়েছে এই শান্তি অরণ্য কুঠির। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। যা দেখার জন্য ভিড় করছে শত শত পর্যটক। পর্যটন মোটেল নির্মাণ শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল। সাম্প্রতিককালে নির্মিত এ মোটেলটি শহরের প্রবেশ মুখেই, পাশে বয়ে গেছে চেঙ্গির শান্ত স্রোত কোন এক পূর্ণিমার রাতে চাঁদের নরম আলোয় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের বিকল্প নেই। ৬.৫০একর জমির উপরে নির্মিত এ মোটেলে মোট কক্ষ সংখ্যা ২৫টি। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় নির্মিত খাগড়াছড়ি গেট, ভাস্কর্য, ম্যুরালসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। এ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো খাগড়াছড়ি শহরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। এসব স্থান ছাড়াও মহালছড়ি হ্রদ, দীঘিনালা বড়াদম দীঘি, জেলা সদরের ধর্মপুর আর্য বন বিহার, খাগড়াছড়ি শাহী জামে মসজিদ, দীঘিনালার বন বিহার ইত্যাদি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। জেলার একমাত্র স্টেডিয়ামটি দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। কেননা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পরেই বহুল আলোচিত শান্তি বাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামেই। -জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি থেকে
×