ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ডবল ডিজিটে নেয়ার যে স্বপ্ন দেখছি আমরা সেটি যে অলীক স্বপ্ন নয়, তার রয়েছে বাস্তব দৃঢ় ভিত্তি এবং জোরালো সম্ভাবনা- তারই সমর্থন ও স্বীকৃতি এবার মিলল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ডেভেলপমেন্ট আউটলুক আপডেটে। বুধবার ঢাকায় ২০১৯ সালের এডিবি ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত নানা ইতিবাচক তথ্য উঠে আসে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চীন হংকং মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাবে, অর্থাৎ ৮ শতাংশে থাকবে বলেও অভিমত প্রকাশ করা হয় এতে। এসবই দেশের জন্য সুসংবাদ। এডিবির মতে, বর্তমান অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ শতাংশে এবং রফতানি প্রবৃদ্ধিও ১০ শতাংশ হতে পারে। নতুন ভ্যাট আইনের কারণে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা আছে। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের মতে দেশে ব্যাংক খাত সংস্কারে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও আরও সংস্কার দরকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি মোকাবেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা দরকার। এডিবি বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহায়তা করছে বলেও জানান তিনি। একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের ভেতরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পরিমাপ হলো জিডিপি, যা কিনা অর্থমূল্যে বা টাকার অঙ্কে প্রকাশিত হয়। এটি অর্থনীতির আকার বা পরিমাণ নির্দেশ করে। আগের বছরের তুলনায় বর্তমান বছরে যে হারে এই পরিমাণ বাড়ে, তাই হলো প্রবৃদ্ধির হার। তবে এই হার কতটা টেকসই তা নির্ভর করে কোন কোন উৎস এ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে তার ওপর। কারা এ প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগ করছে, তার মধ্য দিয়ে প্রবৃদ্ধির গুণমান প্রতিফলিত হয়। বর্তমানে জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির ৪২তম দেশ। ক্রমাগত উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ফলে বাংলাদেশ এই এক যুগে বিশ্ব অর্থনীতির সারণিতে ১৬ ধাপ অগ্রসর হবে। ৭৫টি দেশের মধ্যে এটিই হবে সবচেয়ে বেশি অগ্রসর হওয়া। দেশের জিডিপি ডবল ডিজিটে উন্নীত করার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের জিডিপির হার ৭-৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে বেসরকারীভাবে বিনিয়োগের হার আরও বৃদ্ধি করতে সরকার কাজ করছে। দেশের ভেতরে বড় ব্যবসায়ীদের এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আমাদের দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রী উদারনীতি গ্রহণ করেছেন। গত তিন বছর ধরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। বিগত অর্থবছরের শুরুতে বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে সরকারের লক্ষ্য ছিল ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। তার আগে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি আটকে ছিল ৬ শতাংশের কমবেশি বৃত্তে। সে অবস্থায় জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করেছে ৭-এর ঘর। প্রবৃদ্ধি দশ শতাংশের যে সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি জোরালো অর্থিৈনতক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। শুধু কায়িক শ্রম দিয়ে, কলে কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ৮ পর্যন্ত উত্তীর্ণের নজির রয়েছে উন্নয়নশীল দেশসমূহে। কিন্তু ৮ থেকে ২ ধাপ বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ১০-এ উন্নীত করতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ড অত্যাবশ্যক। অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের বদলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হলে যে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হবে- সেকথা বলাই বাহুল্য। চলমান প্রতিটি অর্থনৈতিক প্রকল্পেরই মূল্যায়ন ও মনিটরিং প্রয়োজন নিয়মিতভাবে। তাহলে সঙ্কট সম্পর্কে জেনে তা সমাধানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অগ্রগতি সাধন সম্ভব হবে। প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নিশ্চিত করতে একই সঙ্গে বেসরকারী বিনিয়োগ খাতকে গতিশীল করা চাই।
×