ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কবিতা

খোলস গোলাম কিবরিয়া পিনু কৃষ্ণচূড়া যেভাবে ফুটেছে অকপটে খোলা হাওয়ায়, সেভাবে ফুটতে পারবে না তুমি! কতটুকু অবারিত ও উন্মুখ হবে তারও বিধি আছে- তারও সীমানা আছে, তুমি তো শ্বেতজবা নও সকল পাপড়ি খুলে ধরবে! সাপও তার খোলস ঝরিয়ে ফেলে থাকেÑ মানুষ পারে না, মানুষের কত রকমের আচ্ছাদন আর ছদ্ম আবরণ! নিজের কলঙ্কÑনিজের গহ্বরÑনিজের খোলস দেখাবার জন্য খোলা দরোজা রাখে না! ** অদম্য পিতার রক্তাক্ত গ্রাফিতি বাদল আশরাফ মায়ের দু’চোখে নিরবধি বয়ে চলে মধুমতি, অতসীর মায়ায় তবুও জীবন অথবা জীবনানন্দ! আজ আমার দু’চোখ মথিত রক্ত পলাশের আবীরে- আমার কাব্য শব্দের সম্ভার স্বপ্নের দেশ আমার আকাশের ক্যানভাসে এঁকে যায় অবিরাম অদম্য পিতার রক্তাক্ত গ্রাফিতি... ফাল্গুনে চৈত্রে ভরে আছি হৃদয় কোকিলে তবু হাহাকার প্রিয় গান সব মৌনতায় কেঁদে ওঠে শোকার্ত মিছিলে, জীবনের সব প্রেম হয়ে যায় লাল সিঁড়ি যেখানে পড়ে থাকে গুলিবিদ্ধ পিতা বাঙালি নামের সমস্ত নদী উৎসারিত যার বুক থেকে...! ** কাক ও বেল কাজী জহিরুল ইসলাম কাক পেকে গেছে এখন আক্রোশে তাই ফাটে বেল বেলেরা এগিয়ে দেয় প্রমিত যৌবন সুপক্ক কাকের ঠোঁটে... শাটিবৃক্ষের কনকাঞ্চল ফলসম্ভারে বিস্মৃত রসাপ্লুত বেলফল থেকে থেকে দোলা দেয় অতিকায় কাকেদের কর্কস হৃদয়ে। নগরে নাগর নামে প্রমোদ ভ্রমণে, সুবর্ণ অতীত। একালে কাকতলাতে বেল, যৌবন যমুনা-জলে বিসর্জনে শতত উদ্বেল। [প্রতিবাস্তব কবিতা] হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৭ জুলাই ২০১৯। ** অন্ধকার ফুঁড়েই আলো আসে বীরেন মুখার্জী সময়ের খাতা হাতে বেদনায় গাঢ় হয় রাত, জেগে থাকে অরণ্য উঠোন; শেলি-বায়রন ঘুরে, শ্যামল সম্পদে থিতু হতে গিয়ে দেখি, বহুধা বিভক্ত হয়ে সরে যায় পথ; তোমাকে জানার পথে সহস্র কাঁটাতার, রাশি রাশি কালচক্র; আহামরি ধর্মের বিউগলে অভিন্ন বাজে বলেই দ্রুত পৌঁছাতে পারি না জীবনের যুগ্মতায়! বিন্দু, অন্ধতার কর্দমাক্ত কোন পথে ত্রিবিধ আলো-গীতি হারাতে দিও না; শ্রাবণ ঢলে ভিজতে ভিজতে কখনও বাস্তচ্যুত ভেবো না নিজেকে; জেনো, মনুষ্যসৃষ্ট সকল ফাঁদ পেরিয়ে যেতে, সম্মতির আলোটুকু যত্ন করে জ্বালিয়ে রাখা চাই; কেননা, অন্ধকার ফুঁড়েই আলো আসে, যার ভেতর সুচিত হয় নতুন প্রত্যুষ। ** রেড সিগন্যাল মাহমুদুজ্জামান জামী বেশি কথা বলতে চাইনি; যতটুকু না-বললে নয়, তাই তো’ বলেছিলাম; জানতাম অতিরিক্ত শব্দের চাপে ফেটে যেতে পারে দ্বিবিধ বেলুন, তবু- পরিমিত কথার পরে যখন আমরা গেলাম দু’দিকে- দেখি, মোড়ে রেড সিগন্যাল- আমারই দিকে তাকিয়ে দিচ্ছে যেন তাচ্ছিল্যের হাসি! ** বিশ্বাসের সকল অভয় ফকির ইলিয়াস কে তুমি জীবন নিয়ে দু’হাতে- এসেছো সমুদ্রে দিতে এই পুষ্পধ্বনি, অনাবিল হাতের মুঠোয় জমা রেখে সম্মতি আর বিশ্বাসের সকল অভয় উড়িয়ে সকল নীল-দেখো বৃষ্টি, মিশেছে রৌদ্রে। আমি সেই খরতাপে খুলে এই কবিতার খাতা লিখছি যে নাম-তারা আগামীর মেঘপরিব্রাজক সাজাবে তারাই জানি, প্রেম আর শান্তির স্তবক তারপর বিলিয়ে দেবে এ মাটিতে সবুজের পাতা। সে পাতায় চোখ রেখে, অবশেষে তুমি জেনে নিও মানুষই পবিত্র জলে আজীবন ভেসে ভেসে যায় সুখ কী দুঃখের মোহ, তাকেই তো চিরকাল তাড়ায় সাহসের উচ্চকিত হাত দেখে- জয়সংকেত দিও। যতই বজ্র নামুক, কাছে আসুক তুফানের তূণ বুকে বুক রেখে শুধু, এঁকে যেও সৃজনের ভ্রুণ। ** ঝরাপাতার রোদন তামিম চৌধুরী হলুদ হবার আগেই আমার সবুজ জীবন চৈত্রের একলা বাতাসে একলা ঘুরে ঘুরে মাটির খুব নিকটে এসেছে। তাতে গাছটার এক তিল কষ্ট হলো না ছিটেফোঁটা অনুতাপ হলো না আমাকে ঝরিয়ে দিয়ে মগডালের খোঁপা খুলে উত্তুরে হাওয়ায় ঠাঁই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে পত্রের সমারোহে একটি পত্র ঝরে গেলে দুঃখ করার যদিও কিছু নেই তোমার পাদদেশে পড়ে থেকে, তবু বলি হে প্রিয়ো- জীবন্ত গাছের কাঠে যেহেতু ঘুণ ধরে না একদিন শিকড় মরে গেলে আমাকে বুঝবে...
×