ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লংস্টোন হিউজের কবিতা

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

লংস্টোন হিউজের কবিতা

স্বপ্নগুলো স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরো শক্ত করে কেননা, স্বপ্নের মৃত্যু হলে জীবন হতে পারে উড়তে অক্ষম এক ডানাভাঙা পাখি। স্বপ্নগুলো আঁকড়ে ধরো শক্ত করে কারণ, স্বপ্নের প্রস্থানে জীবন হয়ে যায় জমাট তুষারের এক ঊষর ক্ষেত্র। ** কৃষ্ণাঙ্গরা নদীর কথা বলে নদীদের আমি জেনেছি আমি নদীদের পৃথিবীর মতো প্রাচীন এবং মানুষের শিরায় বহমান শোণিতের চেয়ে বয়েসী বলে জেনেছি। নদীর মতো গহীন হয়ে বেড়ে উঠেছে আমার আত্মা। নবীন ভোরে আমি চান করেছিলাম ইউফ্রেটিসের জলে কঙ্গোর নিবিড়ে রচেছিলাম কুঁড়েঘর যা ঘুম পাড়াত নীলনদের দিকে তাকিয়ে দেখতাম তার ওপর পিরামিড গড়ে উঠতে মিসিসিপির গান আমি শুনেছিলাম যখন আব্রাহাম লিঙ্কন নিউ অর্লিন্সের দিকে নেমেছিলো এবং আমি তার পঙ্কগ্রস্থদের সূর্যাস্তে সোনালি হতে দেখেছি। নদীদের আমি জেনেছি, প্রাচীন ও গোধূলিমাখা আমার আত্মা নদীর গভীরতা পেয়েই বড় হয়েছে। ** ক্লান্তিময় বিষাদ তাল কেটে যাওয়া গুনগুন ঝিমুনো সুরে, মোলায়েম বিলাপের দোলে এক কৃষ্ণাঙ্গকে আমি বাজাতে শুনেছি অন্য এক রাতে লেনক্স এ্যাভিনিউতে নিস্তেজ ফ্যাকাশে পুরনো গ্যাসবাতির পাশে বিষণœ ক্লান্তির সুরের দিকে অলস হেলে দুলে... অলস হেলে দুলে... তার আবলুস রঙের হাত দুটো হাতির দাঁতের মতো সাদা পিয়ানোর প্রতিটি ঘাটের উপরে রেখে সে ঐ অবলা পিয়ানোটিকে কাঁদিয়েছিল সুরে। আহারে বিষাদ! রিকেটগ্রস্ত দেখতে বাঁকানো টুলে সামনে পেছনে দুলতে দুলতে সে এক বোকা যন্ত্রীর মতো বাজিয়েছিল জীর্ণ সেই সুর। আদুরো বিষাদেরা! আসছিলো এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের আত্মা হতে। ওহ্ বিষাদ! এক গভীর গানের কণ্ঠে মন খারাপের সুরে সেই কৃষ্ণাঙ্গকে আমি গাইতে শুনেছিলাম,ওই পুরনো পিয়ানোর কান্নায়- ‘এই তামাম দুনিয়ায় কি কাউকে পাবো না মা ছাড়া কি কাউকে পাবো না মা যে ভ্রƒ কুঁচকে চলে যাচ্ছে ঝামেলাগুলো শেলফে তুলে রেখে।’ থপ থপ থপ সে চলেছিল মেঝেতে পা ফেলে। কয়েকটা সুর বাজিয়ে তারপর গেয়েছিলো আরো- ‘আমি পেয়েছি ক্লান্তিকর বিষাদ এবং আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমি পেয়েছি ক্লান্তিকর বিষাদ এবং আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি- আমি আর সুখি নই এবং আমার যদি মরণ হতো।’ এবং আরও রাতে সে ঐ সুরকে মোলায়েম করে তুলেছিল। তারারা জ্বলছিল এবং চাঁদেরও কিরণ ছিল। গায়ক যখন গান থামিয়ে গিয়েছিলো শুতে তখন ক্লান্তিকর বিষণœতা তার মাথাজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো। সে এক পাথর বা মৃত মানুষের মতো ঘুমিয়েছিল। ** আমিও তো আমিও তো গান করি আমেরিকা যে আমি কৃষ্ণাঙ্গ ভ্রাতা। যখন কোম্পানি আসে তারা আমাকে খেতে পাঠায় রসুইঘরে। আমি তবে হাসি আর পেটপুরে খাই বেড়েও উঠি শক্তিশালী হয়ে। আগামীকাল আমি খাওয়ার টেবিলে থাকবোই কোম্পানী যখন আসবে তখন কেউ আর আমাকে রসুইঘরে গিয়ে খাও এ কথা বলতে সাহসই পাবে না। অধিকন্তু তারা দেখবে আমি কতো সুন্দর এবং লজ্জিত হবে- আমিও তো আমেরিকা বটে।
×