ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেঙ্গুতে মৃতদের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ডেঙ্গুতে মৃতদের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া রোগীদের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেন, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও বুঝতে পারেননি অনেক ডেঙ্গু রোগী। এ বছর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার পর খুব দ্রুত তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ফলে কিছু বোঝার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তারা। তাছাড়া ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে যাওয়ার বিষয়টিও ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ধরন ধরে ফেলার পর বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা হ্রাসে পেয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এদিকে বৃহস্পতিবার রমেক হাসপাতালে রোজিনা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি গত বছর যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এ বছর তাদের মৃত্যুই বেশি হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকৃতি এমন যারা গত বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল তারা হয়ত বুঝতেই পারেননি। যারা এবার আক্রান্ত হয়েছে তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হলে আমরা তিন দিন অপক্ষো করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেই। কিন্তু এখন জ্বরে আক্রান্ত হলে দেরি করা চলবে না। প্রথমদিনে না হলেও দ্বিতীয় দিনের জ্বরে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। ঢাকা মেডিক্যালের মেডিসিন বিভাগের আরেক সহযোগী অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, যারা মারাত্মক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। মস্তিষ্ক, হার্ট, লিভার, কিডনি ইত্যাদি অংশ কাজ করে না। ফলে তাদের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ডেঙ্গু শনাক্ত এবং চিকিৎসা শুরু না হওয়ার কারণেই কিছুসংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সকে ডেঙ্গু চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসা গাইড লাইন। হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে বলেই ডেঙ্গু আক্রান্তের শতকরা ৯৮ ভাগ ছাড়প্রাপ্ত পাচ্ছেন বলে দাবি করেন মহাপরিচালক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৮। এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ১১৭ এবং ঢাকার বাইরে ২৭১। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ১৭০৪ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১০৪৫ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬,৫৪৩ জন ও ৮৪,৬১৫ জন। সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৮ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১২৬ জনের মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৭৫ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ২১১, চট্টগ্রামে বিভাগে ১৪৮, খুলনা বিভাগে ৩৮৪, রংপুর বিভাগে ২৪, রাজশাহী বিভাগে ৯০, বরিশালের ৬ জেলায় ১৪৬ এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১২ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ৩০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩৫, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৪, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬৭, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৫, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৮, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৬ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে নতুন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২০ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। চমেক হাসপাতালে মৃত্যু ১ ॥ এদিকে স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোজিনা বেগম (২৮) নামের এ রোগী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোজিনা নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকার মোঃ স্বপনের স্ত্রী। তিনি স্ট্রোকের কারণে বুধবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।
×