ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান

দীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্যে জনকল্যাণে নিবেদিত শেখ হাসিনা। নিজ যোগ্যতাগুণে সম্মুখে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে ভাবি, শেখ হাসিনার জন্ম না হলে এ জাতিকে কে এমনভাবে মায়ের মমতায়, বোনের স্নেহে একজন আদর্শিক নেতৃত্বগুণে কেবল দেশে নয় বিশ্ব পটভূমিতে আলোকিত করার কোন বিকল্প হয়ত জন্মাত না। তিনি এমন দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব নিজের দলের বেপথোদের সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি একজন আদর্শবান নেত্রী যিনি নারীদের আলোকিত করার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়েও বিপদ সঙ্কুল পথকে বন্ধু ও মসৃণ করে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে বিশ্বাসঘাতকতা মোশতাক-জিয়া করেছিল, তা যথানিয়মে বিচার প্রক্রিয়ায় এনেছেন। দূরদর্শী নেত্রী হিসেবে চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। অবশ্য তাকে অনেক ক্ষেত্রেই একলা চলো নীতি গ্রহণ করতে হচ্ছে। যাকে তিনি বিভিন্ন স্থানে পদায়ন করছেন, সবাই যে তার আস্থার প্রতিদান দিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এ জন্যই তিনি ছাত্রলীগে সম্প্রতি সংস্কার করেছেন এবং এখন যুবলীগে সংস্কার কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি তার নির্দেশের প্রেক্ষিতে দেশে যে ক্যাসিনো কালচারের আবিষ্কার হচ্ছে, সাধারণ জনমানুষ এতে বেশ আশ্চর্য হয়েছে! এতে কিছু বিভ্রান্তিকর ব্যক্তি উল্টাপাল্টা বললেও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতি জনমর্থন যেমন বেড়েছে, তেমনি শেখ হাসিনার প্রতি জনশ্রদ্ধাবোধ আরও গাঢ় হচ্ছে। আশ্চর্য লাগে, জনমানুষের এই নেত্রী যখন দেশকে এগিয়ে নিতে নিরন্তর সংগ্রাম করছেন, তার প্রজ্ঞা দ্বারা জনসেবা করছেন, তখন কিছু স্বার্থবাদী ও কায়েমী ব্যক্তিবর্গ নিজেদের আখের গোছাতে নানামুখী পদক্ষেপ করে চলেছেন। এরা রাতকে দিন বলেন। অবাক হতে হয়, ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপি-শিবির-জামায়াত এবং নানামুখী বামপন্থী কেমন করে যেন কোন কোন ক্ষেত্রে বড় ছাত্রলীগার-যুবলীগার-আওয়ামীলীগার হয়ে পড়েছেন। ইতিহাসের শিক্ষা তারা যেন দারা-আওরঙ্গজেব-জাহানারার মতো প্রতিযোগিতা তৈরি করতে না পারে। এদের দমন করা সহজ কাজ নয়। তারপরও শেখ হাসিনা দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। তার এ নির্দেশ জনগণকে আশ্বস্ত করেছ- জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের কথা যেমন শেখ হাসিনা ভাবেন, তাদের উন্নয়নের জন্য নানামুখী পদক্ষেপও তিনি গ্রহণ করছেন। একজন সাবেক ছাত্রলীগার হিসেবে মাঝে মধ্যে মনে হতো, কেমন করে গিরগিটির মতো রং বদলানোরা দলে ভাল অবস্থান করে, দলকে তাদের অসাধুতার সমার্থক করতে চেষ্টা করে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী সে যত বড় ক্ষমতাধর ও ক্যাডারবাজ হোক, তাদের কোন দল থাকতে নেই; তাদের অসাধুতার কালো দাগ কেন দলের জন্য এক মণ পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা নষ্ট আবর্জনার জন্য বদনামের ভাগীদার হতে হবে? কেন ছাত্রলীগকে কতিপয় উপাচার্যের অপকর্ম ঢাকতে হতে হবে? অথচ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে হয়েছিল, শেখ হাসিনাও এক সময় ছাত্রলীগ করেছেন। আবার এখন ছাত্রলীগকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক সময় দেখা যায়, দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান দীর্ঘদিন না চালালে জং ধরে যায়। নিশ্চয়ই নেত্রীর কাছে বিভিন্ন পদস্থ নেতা-নেত্রীর আমলনামা আছে। আশা করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। কয়েকদিন আগে পত্রিকান্তরে একটি সংবাদ পড়ে বিস্মিত হয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি মোঃ আমীর হোসেন যিনি ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগ করার সুবাদে শেখ কামালের অত্যন্ত ¯েœহধন্য ছিলেন। তার ফোন অন্যদের সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘৃণ্য পদক্ষেপ কারা ঘটিয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তিনি একজন শিক্ষক, কেবল মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ান না, দক্ষ প্রশাসকও তিনি। অন্যায্যভাবে তার মতো একজন বঙ্গবন্ধুপ্রেমীকে ভিন্ন তকমা দিতে চান, তারা আর যাই হোক কেবল স্বীয় স্বার্থসিদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিশৃঙ্খলা তার অনেকাংশজুড়েই চলছে এক ধরনের লুটেরা মনোবৃত্তি। শক্ত হাতে যারা ন্যায়ের পক্ষে আছেন তাদের সমর্থন দেয়া দরকার। নচেৎ ছোটখাটো ঘটনায়, যার যার মতো করে সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত তাড়াতাড়ি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে। নৈরাজ্য ও ব্যক্তি স্বার্থে যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন তাদের বিপক্ষে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেয়া দরকার। শেখ হাসিনা যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন, তা পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-গবেষণা ও মানবকল্যাণে কর্মমুখী শিক্ষার উপযোগী মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কতদিন ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলবে? দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সত্যিকার মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে উঠতে হলে ছ ঝ জধহশরম -এ নাম লেখাতে চেষ্টা করতে হবে। ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’-এর সফল রূপকার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের হাসপাতালে থাকা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্যে বার বার তাগিদ দিয়ে আসছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কিছু সংখ্যক চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা হাসপাতালে ঠিকমতো থাকেন না। রোগীকে যথাযথ চিকিৎসাও প্রদান করেন না। আবার নার্সদের অধিকাংশই সেবা প্রদান করেন না। সেটা গ্রামই হোক কিংবা শহরেই হোক অথবা রাজধানীতে হোক। ১৯৭৫ সালে এটি কেবল যখন হাসপাতাল ছিল, তখন ডাক্তারদের যে আন্তরিকতায় আমার ভাই সুস্থ হয়েছিল; চুয়াল্লিশ বছর ব্যবধানে এখানে চিকিৎসকরা যেন হয়ে উঠেছেন ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রতিভূ। পরে সেবা না পেয়ে রাতে বন্ড দিয়ে ওই প্রসিদ্ধ মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে বাধ্য হই। আশা করি ডাক্তার-নার্স এবং টেকনিশিয়ানরা কেবল অর্থ পাওয়ার আশায় রোগীকে ব্যবহার করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন যদি মানতেন তবে দেশে ভাল চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশে গড়ে উঠত। বিদেশে দেশ থেকে অর্থ চিকিৎসা বাবদ অর্থ পাচার হতো না। দেশে আরও বেশি দক্ষ ও জনদরদী চিকিৎসক দরকার। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দেখলাম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কেউ কেউ কেবল হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা কাটান না বরং একই দিনে রোবটের মতো তিন/চারটি চেম্বারে বসেন। আসলে অর্থগৃধœু ডাক্তার দিয়ে আর যাই হোক, রোগীর সত্যিকার যতœ এবং আরোগ্য সাধন সম্ভব নয়। এ জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সফল উদ্ভাবন করেছেন। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি মানুষের কথা ভাবেন। তাদের উন্নয়নের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি, আদর্শ নিয়ে কাজ করেন। মাঝে মাঝে ভাবি, দেশের জন্য উনার এ যেন ভাবনা, যারা স্বার্থ সিদ্ধি ও ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ লড়ে যাচ্ছেন। তারা যে কখন মীর জাফর-খসেটি বেগম কিংবা রায় দুর্লভ, উমিচাঁদ হতে চেষ্টা করবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়? বাংলার মানুষের জন্য ভালবেসে উনি দারিদ্র্য দূরীকরণ করতে চেষ্টা করছেন; তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছেন। যেখানে আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা মাস্টার্স করার পর ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার চাকরির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। পত্রিকান্তের দেখলাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু করা অভিযান একটি ক্লাবে পাঁচ লাখ টাকার ক্যাসিনোর টিকেট আছে। এ বৈপরীত্য এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠী চোখ পাল্টাতে সময় লাগে না। অথচ দেখা যাবে এদের কাছেই ব্যাংকের নন পারফর্মিং লোনের সিংহভাগ। ক্যাসিনোর অর্থ মানিলন্ডারিং হচ্ছে এবং বিদেশীরা মুক্ত বলে পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর প্রকাশ্য মদপান, জুয়া খেলা, ঘোড়া দৌড় এবং শেয়ার বাজারও নিষিদ্ধ করেছিলেন। এমনকি সংবিধানে ও প্রসটিটিউশন এবং জুয়া নিষিদ্ধ রয়েছে। ১২ ভিআইপির ব্যাংক হিসাব নজরদারি করাটা অবশ্যই ভাল কাজ। ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায়, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে খারাপ কিছু হতেই পারে। কিন্তু সেই খারাপকে আবার পরিশুদ্ধ করতে পারে কেবল শেখ হাসিনার মতো দক্ষ কা-ারীরা। তিনি প্রমাণ করেছেন, এক অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে যিনি জনমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বোঝেন। প্রশ্ন দেখা দেয়, উনার পর কে আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন। কিন্তু সেটি ভাবীকালই আওয়ামী লীগারই নির্ধারণ করবেন। তবে সম্পদ লুটেরাদের দমনের মাধ্যমে দলের প্রতি জনগণের বিশ্বাস বাড়বে। কেননা আগামী দশ বছর শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এ সময়ে তাকে নিরন্তর দেশসেবা করার সুযোগ দেয়া উচিত। এ দেশে হাউজি, মদ, জুয়া, অশ্লীল নৃত্য গ্রাম থেকে শুরু করে থানা, মফস্বল, জেলা এবং রাজধানীতে শুরু করেন জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়া আর জামায়াতের সময়ে এটি ক্যাসিনো আকারে বেড়ে ছিল। তবে ইদানীং আবার বেড়েছে বলে এ শুদ্ধি অভিযান। প্রশ্ন জাগে, একজন মানুষের কত ধন-সম্পদের প্রয়োজন? আবার দুর্নীতির মাধ্যমে সহজলভ্য বলেই এভাবে টাকা ওড়ায়। সাময়িকভাবে মানুষকে যারা বিপথে পরিচালনা করে মিথ্যা অপবাদ দেয়, বিভিন্ন বিপদে ফেলায়, অস্ত্রের ঝনঝনাতি শক্তি প্রদর্শন করে দীর্ঘ মেয়াদে সে অর্থ বিনষ্ট হয়। এদিকে জোর করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গুলশান ও বনানীতে পরিচালিত হচ্ছে- যার মূল শাখা টাঙ্গাইলে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কেননা শিক্ষার বদলে সেখানে কুশিক্ষা ও প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা পাচ্ছে। আসলে কালো তালিকা ভুক্ত হওয়া উচিত। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ [email protected]
×