ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদে মদদ

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জঙ্গীবাদে মদদ

বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ রফতানি করছে যুক্তরাজ্য- রীতিমতো চমকে ওঠার মতো খবর বটে। আরও যা অবাক বিস্ময়ের ঘটনা, এই অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত অত্যন্ত প্রভাবশালী সুখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ইকোনমিস্টের পক্ষ থেকে। ১৯ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় পত্রিকাটি এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘হাউ ব্রিটেন এক্সপোর্ট ইসলামিস্ট এক্সট্রিমিজম টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারও বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ও মদদদাতাদের পেছনে একাধিক বিদেশী শক্তির হাত রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময়ে উগ্র মতাদর্শসহ অর্থ ও আনুষ্ঠানিক উপকরণ এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দিয়ে থাকে। উদাহরণত বলা যায়, ১৯৯০ সালের প্রারম্ভে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ গোলাম মাওলা তখন পড়াশোনা করছিলেন লন্ডনে। উল্লেখ্য, অপেক্ষাকৃত এলিটদের সংগঠনটি উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচারসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে মদদ দিয়ে থাকে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। ২০১৬ সালে গুলশানে সংঘটিত হোলি আর্টিজানে সশস্ত্র জঙ্গীগোষ্ঠীর হামলার পেছনে যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ‘গ্রীন ক্রিসেন্ট’-এর আর্থিক সহায়তার প্রমাণ মেলে। এই সংগঠনটির সঙ্গে দেশের একাধিক মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তাসহ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীনের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও আছে। গ্রীন ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে এমনকি যুক্তরাজ্যেও একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্বপ্রাপ্ত আট শতাধিক সদস্যের আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসএ যোগ দিয়ে তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ, যাদের মধ্যে রয়েছে শতাধিক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। এর বাইরেও রয়েছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পলাতক কতিপয় বাংলাদেশীর নাম, যাদের মধ্যে অন্যতম তারেক রহমান। এরা দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দুর্নীতি এবং গ্রেনেড হামলাসহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য দ-প্রাপ্ত হয়েও লন্ডনে বসে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। বাংলাদেশ বার বার এসব পলাতক আসামিকে ফেরত চাইলেও বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় তা বাস্তবায়িত হতে পারছে না। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। উল্লেখ্য, স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম আযমও আশ্রয় পেয়েছিলেন লন্ডনে। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। তবে এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। এর পাশাপাশি আমলে নিতে হবে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটিকেও।
×