ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারন্যাশনাল ওয়েটলিফটিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ

থাইল্যান্ডে মাবিয়ার ভরাডুবি, আসন্ন এসএ গেমসে সাফল্য নিয়ে সংশয়!

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

থাইল্যান্ডে মাবিয়ার ভরাডুবি, আসন্ন এসএ গেমসে সাফল্য নিয়ে সংশয়!

রুমেল খান ॥ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। ভারতের গোয়াহাটি। ভোগেশ্বরী ফুকানানি ইনডোর স্টেডিয়াম। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস। ভারোত্তোলনে মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণী। স্বর্ণপদক জিতলেন যিনি তিনি পদক নিতে পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়ালেন। মাইকে বাজছে জাতীয় সঙ্গীত, পাশে উড়ছে জাতীয় পতাকা। গলায় পদক পরে পতাকার দিকে তাকিয়ে স্যালুট তুলে দাঁড়িয়ে আকুল হয়ে কেঁদে যাচ্ছেন একটানা। ওই আসরে বাংলাদেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক এনে দেন তিনিই। তার নাম সীমান্ত। মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। ক’দিন পরেই আরেকটি দক্ষিণ এশিয়ান গেমস। বাংলাদেশী ক্রীড়াপ্রেমীদের নিগূঢ় প্রত্যাশা- এবারও নিজ ইভেন্টে স্বর্ণপদক ধরে রাখবেন তিনি। কিন্তু সীমান্ত নিজের প্রত্যাশার কথায় হতাশই হতে হবে সবাইকে। কেননা আসন্ন এসএ গেমসে তিনি নিজেই যে তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখতে সন্দিহান! ক’দিন আগেই সীমান্ত থাইল্যান্ডের পাতায়ায় গিয়ে খেলে এলেন আইডব্লিউএফ (ইন্টারনাশনাল ওয়েটলিফটিং ফেডারেশন) ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে। এখানে তিনি অংশ নেন মেয়েদের ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণীতে (এই আসরে ৬৩ কেজির ইভেন্ট না থাকায় সীমান্তকে ৬৪ কেজি ইভেন্টে খেলতে হয়)। ¯œ্যাচে তোলেন ৮০ কেজি, ক্লিন এ্যান্ড জার্কে তোলেন ১০৩ কেজি। সবমিলিয়ে উত্তোলন করেন ১৮৩ কেজি ভার। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা ভারোত্তোলন। অথচ তারপরও ৪২ প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি হন ৩৪তম! সীমান্ত সর্বোচ্চ ১৮০ কেজি ওজন তুলেছিলেন গত বছর কমনওয়েলথ গেমসে। তারও আগে আজারবাইজানে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে তুলেছিলেন ১৭৯ কেজি। তুর্কমেনিস্তানে এশিয়ান ইনডোর গেমসে তুলেছিলেন ১৭৪ কেজি। গত বছর জাতীয় ভারোত্তোলনে রেকর্ড ১৭২ কেজি তুলে স্বর্ণ জিতেছিলেন। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এই ইভেন্টে চীনের ওয়েই দেং মোট ২৬১ কেজি (¯œ্যাচে ১১৬ কেজি, ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ১৪৫ কেজি) ভার তুলে জেতেন স্বর্ণ। দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে সীমান্তর আগে আছেন কেবল একজন। তিনি ভারতের রাখী হালদার। তিনি তোলেন ২১৪ কেজি। তার অবস্থান চতুর্দশ। এই রাখীই মূলত আসন্ন এসএ গেমসে সীমান্তর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ দেখা যাচ্ছে তিনি সীমান্তর চেয়ে ৩১ কেজি বেশি ভার তুলেছেন। আর স্বর্ণজয়ী চীনের ওয়েই দেং সীমান্তর চেয়ে ভার তুলেছেন ৭৮ কেজি বেশি! এ থেকেই সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে বিশ্বসেরা এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরার চেয়ে কতটা পিছিয়ে আছেন সীমান্ত। শুধু তাই নয়, রাখী যে সীমান্তর চেয়ে অনেক আগে থেকেই এগিয়ে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ২০১৬ এসএ গেমস। সেবার রাখী স্বর্ণ জিতেছিলেন ৬৯ কেজি ওজন শ্রেণীতে, ১৯৪ কেজি ভার তুলে। এবার রাখী আসন্ন এসএ গেমসে সীমান্তর ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতেই অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এই ইভেন্টে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের অন্য যেসব প্রতিযোগী অংশ নেবেন তাদের ক্যারিয়ারসেরা ভারোত্তোলন সীমান্তর চেয়ে বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে ৩১ কেজি বেশি ভার তুলে রাখীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বর্ণপদক জেতাটা কতটা সম্ভব সীমান্তর জন্য? এখন তো সংশয়ই দেখা দিয়েছে এই ইভেন্টে তিনি তাম্রপদকও জিততে পারবেন কি না। সীমান্ত নিজেও হয়তো বিষয়টি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। তাইতো তিনি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন ফেডারেশনের অবহেলায় এবার ভাল করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নন তিনি। স্বর্ণপদক জয়ের আকাক্সক্ষা আছে, তবে প্রতিযোগিতার মান বিবেচনায় তা কঠিন বলেছেন স্বর্ণজয়ী ১৯ বছর বয়সী এই ভারোত্তোলক। অলিম্পিয়াড হতে চাওয়া মাবিয়া পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে চরম হতাশ। ফেডারেশন তাকে নিয়ে কোন পরিকল্পনাই করেনি, এমন অভিযোগ তার কণ্ঠে। ক্রীড়াঙ্গনে ভারোত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি গুজব প্রায়ই শোনা যায়। সেটি হলো বাংলাদেশ ওয়েটলিফটিং ফেডারেশনের কর্মকর্তারা নাকি ২০১৬ এসএ গেমসে ভারতের ওয়েটলিফটিং কর্মকর্তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করে বাংলাদেশের জন্য একটি স্বর্ণপদক ‘ম্যানেজ’ করেছিলেন। আর সেই স্বর্ণপদকটি আসে মেয়েদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে যা জেতেন সীমান্ত। শুধু তাই নয়, এই ইভেন্টে সীমান্ত যে ১৪৯ কেজি ভার তুলে স্বর্ণ জেতেন, সেটি তখন অনেকের কাছেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল, কারণ ওই ইভেন্টে ১৪৯ কেজি তেমন কোন ওজনই নয়। ফলে সীমান্তর ওই সাফল্য নিয়ে এখনও সেই গুঞ্জন শোনা যায়। যদিও এর সপক্ষে আজ পর্যন্ত কোন জোরালো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা ঠিক বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন আসন্ন এসএ গেমসে সীমান্তকে দিয়ে যদি স্বর্ণপদক লাভ করতে চায় তাহলে সেটা যে অনেকটাই অসম্ভব ব্যাপার, তা ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছেন সীমান্ত। ফেডারেশনের অবহেলা-অসহযোগিতার যেসব অভিযোগ করেছেন সীমান্ত তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন একটি ঘোষণা দিয়েছিল। জাতীয় ভারোত্তোলন দলের ভারোত্তোলকদের আগামী ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠেয় সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস উপলক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ট্রায়ালে এবং এসএ গেমসের মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রেকর্ড গড়লে তাদের অর্থ পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়। এমনকি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়ও রেকর্ড গড়তে পারলেও বোনাস দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এই বোনাস শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, পাবেন তাদের কোচরাও। জাতীয় দলের ভরোত্তোলকদের অনুশীলনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তাদের প্রতিমাসের চতুর্থ সপ্তাহে (শেষ শুক্র ও শনিবার) ফেডারেশন ট্রায়ালের ব্যবস্থা করবে। ট্রায়ালে ব্যক্তিগত রেকর্ড অতিক্রমকারী খেলোয়াড়দের প্রতিটি ওজন শ্রেণীতে প্রতিকেজি অতিরিক্ত উত্তোলনের জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে যথাক্রমে তিন হাজার, দুই হাজার ও এক হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত রেকর্ড অতিক্রমকারী খেলোয়াড় ও কোচ একই নিয়মে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত হওয়ার এবং শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হলে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এতকিছুর পরও কোন সুফল যে আসেনি সেটা সীমান্তর হতাশাতেই পরিষ্কার। এসএ গেমসে সীমান্তসহ সব বাংলাদেশী ভারোত্তোলকদের ভরাডুবি ঘটলে এরজন্য দায়ী কে হবেন, ভারোত্তোলকরা নাকি ভারোত্তোলন ফেডারেশনের হোমরা-চোমরারা?
×