ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা

প্রকাশিত: ১১:২৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন বাঙালীর হাত ধরে বাংলাদেশে এক স্বাধীন পতাকা উড়ল। যার রং তোমার আমার ভালবাসা, সবুজে আর সূর্যের রঙে রাঙানো। যার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গান করি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। ভালবাসার এই অংশটুকু যার হাত ধরে আমরা আজ অবধি পথ চলছি। যে বিদ্যায়তনে তুমি পাঠ করছো, যে শিক্ষায়তনে তুমি তোমার ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য নিজেকে তৈরি করছ, তার পেছনের এই কথাগুলো ভুললে চলবে না। তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অতএব আসো আমরা আমাদের ভালবাসা দিয়ে, আমাদের দেশপ্রেম দিয়ে, আমাদের সমস্ত সুসত্তা দিয়ে সমস্ত কু-কে অপসরণ করি। যে দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করেছিলেন তার কাছে আমাদের সমস্ত ভালবাসা ন্যাস্ত করি। তোমাদের দেশের প্রতি ভালবাসা, মাটির প্রতি ভালবাসা, জলের প্রতি ভালবাসা, অগ্নির প্রতি ভালবাসা, বায়ুর প্রতি ভালবাসা এবং মানুষের ভালবাসার ভেতর দিয়ে তুমি যদি তোমার ভবিষ্যতের স্বপ্নকে নির্মাণ করো তাহলে সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা দেখানো হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে’-জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় একথা বলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছরব্যাপী বক্তৃতানুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। অনুষ্ঠানে নটরডেম কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর একশ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরে অংশ নেয়। একক বক্তৃতানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজ আহম্মদ। উপস্থিত ছিলেন জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও কিপার শিহাব শাহরিয়ার এবং নটরডেম কলেজের শিক্ষক মিজানুর রহমান। একক বক্তৃতায় কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বঙ্গীয় এ জমিন সত্যিকার অর্থে কোনদিন স্বাধীন ছিল না। একটু পেছনে ফিরে আমরা বলে থাকি ইংরেজরা এই দেশ দখল করেছিল। তারও একটু আগে মোগলেরাই এই দেশে ছিল। নবাব সিরাজউদৌলাও স্বাধীনতার আন্দোলনকারী ছিলেন। কিন্তু কেউ তো বাঙালী ছিলেন না। তারও আগে কি পাল বংশ, কি সেন বংশ, কি আফগান কেউ কিন্তু বাঙালী ছিলেন না। একজন বাঙালীর হাত ধরে বাংলাদেশে এক স্বাধীন পতাকা উড়ল। নানাভাবে আমরা আমাদের ধর্ম নিয়ে, আমাদের বর্ণ নিয়ে এবং আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কটে পড়ি। আমাদের সঙ্কটের কোন কিছু নেই, ছিল না কিন্তু আমাদের সঙ্কট তৈরি করার জন্য আমাদের ভিতরে আছে বিষধর সাপ। বন্ধুরা, ভাইয়েরা, ¯েœহের পুত্ররা তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ তোমরা বিবেকবান হচ্ছ, তোমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যত হচ্ছ, বিবেচনার অংশটুকু তোমরা জমা রাখবে প্রকৃত ইতিহাসের কাছে। কিন্তু ইতিহাস যদি বদমাস হয় তখন মানুষ বড় কষ্ট পায়। ইতিহাসকে বদমাস হতে দিও না। সে সুযোগ যেন সে কখনও না পায়। আমাদের সমস্ত নিবেদন পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য। আগামী বছর আমাদের জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালিত হবে। তারই আয়োজন স্বরূপ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর যে আয়োজন করেছে এর অংশ হিসেবে তোমরা যতটুকু অর্জন করেছ, তোমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আমার কাছ থেকে, আমাদের কাছ থেকে যে সামান্য কিছু শিখলে, এটি শুনলে এটি সামান্য হলেও মূল জিনিসটি তোমার কাছে। তুমি ১৯৭৫ পরবর্তী এবং আজ অবদি এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে এ দেশের মানুষের সঙ্গে যুক্ত হবে। একজন মানুষ তার পরবর্তী পর্যায়ে তার দীক্ষা জীবন, তার যাপনের সমস্ত অংশে কিভাবে মানুষকে ভালবাসবে সে কথাগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা জানো তুমি যদি এক লেখ, এক থেকে যায়। যদি একের বা পাশে একটি শূন্য দাও তখন সেটি একই থেকে যায়। তখন মনে হয় এ শূন্যের কোন অর্থ নেই কিন্তু যদি এক লেখ এবং শূন্যটিকে বা থেকে ডাইনে আনো তাহলে সেটি দশ হয়। আমি তোমাদের কাছে আহ্বান জানাব শূন্যকে শূন্যে রাখবে না, তাকে ডাইনে বসিয়ে দশ করবে, তারপর একশ করবে, তারপর হাজার করবে, তারপরে লক্ষ্য করবে। বাদীকে যতই শূন্য দিয়ে যাবে ততই ভ্রান্তির ভেতরে যাবে এক আর দুই কিংবা দশও হবে না। শূন্যকে তার স্থানে স্থাপন করি যে শূন্য মহতের জন্য, যে শূন্য ভালর জন্য। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন জাতীয় জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার গর্বিত নাগরিক আমরা। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ রিয়াজ আহম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস। বাঙালীর প্রেরণার নাম। শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করেছেন। ৭৫’ নির্মম হত্যাকাণ্ড বঙ্গবন্ধু এবং তার আদর্শ ও দর্শনকে মুছে দিতে পারেনি। বাংলার মানুষ তাকে আগেও যেমন ভালবেসেছে আজও তাকে তেমনভাবেই হৃদয় দিয়ে ভালবাসে।
×