ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেলেও ডেঙ্গুু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেলেও ডেঙ্গুু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর পিক মৌসুম বলা হয়ে থাকে। গত ১৮ বছর ধরে এই তিন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। তাছাড়া দেশের প্রায় ৬০ জেলায় এখনও ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দৈনিক আক্রান্ত নতুন রোগীর হারও স্বাভাবিক মাত্রায় আসেনি। অব্যাহত রয়েছে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু মশক নিধন, ডেঙ্গু সচেতনতা ও মনিটরিং কার্যক্রম এবং হাসপাতালে আগত ডেঙ্গু রোগীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ যথাযথ চিকিৎসাসেবায় ভাটা পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুধবার খুলনায় এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেলেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি কমছে না। দেশবাসীর মনে ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়ে গেছে। এখনও প্রতিদিন জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হাসপাতালে ভিড় জমায় লোকজন। কিন্তু রাজধানীতে ঝিমিয়ে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, বুধবার হয়েছে দিনভর। ভারি বর্ষণ হলে এডিস মশার প্রজনন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে যে ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে তা এডিস মশার প্রজননে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। তাই মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা দরকার। অভিযোগ উঠেছে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় গড়ে তোলা বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছে অনেক সরকারী- বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেক ডেঙ্গু রোগী। আর ঢাকার বাইরে নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়েই গেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩৯৮ । এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ১৩১ এবং ঢাকার বাইরে ২৬৭। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ১৭৪৫ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৮০ জন এবং ঢাকার বাইরে ১০৬৫ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬,১৫৫ জন ও ৮৪,১৮৬ জন। সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৮ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১২৬ জনের মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৭৫ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ২২৪ জন, চট্টগ্রামে বিভাগে ১৪০, খুলনা বিভাগে ৩৯৬, রংপুর বিভাগে ২৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৩, বরিশালের ৬ জেলায় ১৪৩ এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১৫ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ৩০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩২, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৬, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৩, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭৪, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৭, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭৪, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৮ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
×