ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে ঘরেবাইরে বেকায়দায় বিএনপি

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে ঘরেবাইরে বেকায়দায় বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ ছাত্রদল নিয়ে বেকায়দায় বিএনপি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক সিনিয়র নেতার বাসায় গভীর রাতে কাউন্সিলরদের ডেকে সরাসরি ভোটে সংগঠনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করলেও এ কমিটি নিয়ে ঘরেবাইরে চাপের মুখে বিএনপি। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৌশল নির্ধারণে বিএনপির কিছু নেতা লন্ডনপ্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের গ্রুপিং কোন্দলে প্রায় ৩ মাস নেতৃত্বশূন্য থাকার পর ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। এতে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় ইকবাল হোসেন শ্যামল। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করায় খোদ বিএনপি নেতাদের মধ্যেই এ কমিটি নিয়ে দিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। দলের সহযোগী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদলের নতুন নেতাদের বিএনপি মহাসচিব শুভেচ্ছা জানান দুদিন পর। আর (২ কমিটি গঠনের তিনদিন পর নতুন নেতাদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে মির্জা ফখরুল সেখানে যথাসময়ে পৌঁছলেও ছাত্রদলের নতুন নেতারা তাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার অনুসারীদের বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে জিয়ার মাজারে এক ঘণ্টা পর পৌঁছে। অবশ্য পরে এ জন্য ক্ষমা চায় ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে সঙ্কট দেখা দিলেও বিএনপি এটাকে আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূত বলে প্রচার করতে থাকে। এ বিষয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রদলকে ধ্বংস করতে আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও আদালত ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এভাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ করা দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, একটি সফল কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২৭ বছর পর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের প্রশংসা অর্জন করা সম্ভব হলেও ‘অছাত্র’ নিয়ে কমিটি করায় ছাত্রদল ও বিএনপির অপর অংশ বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। এ জন্য এ কমিটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। বিশেষ করে ছাত্রদলের যে অংশটি তাদের শীর্ষ পদে আশা করেনি তারা নতুন কমিটির সমালোচনা করতে থাকে। এ ছাড়া এভাবে মধ্যরাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণ করা নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভেতরে রয়েছে নানা গুঞ্জন। উল্লেখ্য, ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে নতুন কমিটির নেতা নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশে কাউন্সিল স্থগিত করায় ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মির্জা আব্বাসের বাসায় ভোট গ্রহণের। ওদিন রাত পৌনে নয়টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু করে রাত সাড়ে বারোটায় শেষ করা হয়। ১১৭ সাংগঠনিক শাখার ৫৩৩ কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮১ জন ভোট প্রদান করে। ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর সোয়া চারটায় ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার পর ছাত্রদলের একাংশ খুশি হলেও অপর অংশ চরম নাখোশ হয়। তারা ভেতরে ভেতরে কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। এর আগে ’৯২ সালে কাউন্সিলরদের ভোটে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। ওই নির্বাচনে সভাপতি হয়েছিলেন বিএনপির বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাধারণ সম্পাদক ‘গুম’ হওয়া বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। এরপর বেশ ক’টি কমিটি গঠন করা হয় ভোট ছাড়াই। ভোট ছাড়া সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ’১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। এ বছর ৩ জুন ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এদিকে ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দিলেও তা এখন চরম হুমকির মুখে। কারণ, ইতোমধ্যেই আদালত এ কমিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে ইতোমধ্যে একটি আংশিক কমিটি তারা তৈরি করে রাখে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় এ কমিটি ঘোষণার বিষয়ে তাদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বিএনপির একটি অংশ আদালতের রায় আমলে না নিয়ে আংশিক কমিটি ঘোষণা করার পক্ষে। কারণ, এ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য পদে নেতা নির্বাচন করতে বলেছে দলের হাইকমান্ডকে। তবে দলের অপর অংশ এ নিয়ে নতুন করে আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চায় না। কারণ, ২৩ সেপ্টেম্বর আদালত থেকে ছাত্রদলের নতুন কমিটির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শাও নোটিস দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রদলের নতুন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আদালতের রায়ের সঙ্গে ছাত্রদলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কারণ, আদালতের রায় দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি হয়নি। কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করেছে। আর আদালতের কোন নোটিসও আমাদের কাছে আসেনি।
×