ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বান্দরবানের আদিবাসী পল্লীতে সেই জিকে শামীমের থাবা

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বান্দরবানের আদিবাসী পল্লীতে সেই জিকে শামীমের থাবা

এস বাসু দাশ, বান্দরবান, ২৫ সেপ্টেম্বর ॥ সদরের পর্যটন জোন হিসেবে খ্যাত মিলনছড়িতে আদিবাসী পল্লী দখল করে গড়ে ওঠা বিলাসবহুল পর্যটন রিসোর্ট সিলভান ওয়াই রিসোর্ট এ্যান্ড স্পাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন দেশের আলোচিত যুবলীগের নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। জানা গেছে, প্রায় দুইশ কোটি টাকা বিনিয়োগের টার্গেট নিয়ে আদিবাসী পল্লী উচ্ছেদ করে ১০০ একর পাহাড়ী এলাকাজুড়ে বিলাসবহুল এই রিসোর্টটি তৈরি করা হচ্ছে। রিসোর্টটির মালিকানায় যে ৮ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন তার মধ্যে জিকে শামীম একজন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এখানে কমপক্ষে ১০০ একর জমি জবরদখল করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য পুলিশ ফাঁড়ির জন্য জমি দান করে সেখানে পাকা ভবনও করে দেয়া হচ্ছে। দ্বিতল ভবনটি নির্মাণের কাজ এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। শীঘ্রই এই ভবনে পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরিত হওয়ার কথা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান চ্যাপ্টারের সভাপতি জোয়াম লিয়ান আমলাই বলেন, প্রশাসনে সহযোগিতায় আদিবাসীদের ভূমি জিকে শামীমসহ অন্যরা দখল করেছে, আমরা এই ভূমি দখলমুক্ত চাই। রিসোর্টটির সভার রেজুল্যশন কপির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল রিসোর্টটির একটি বোর্ড মিটিং জেলা সদরের ৩১৩ নম্বর রেজি. অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেখা যায়, জসিম উদ্দিন মন্টু চেয়ারম্যান, ফজলুল করিম চৌধুরী (স্বপন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম), শামিল উদ্দিন শুভ উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালক হিসেবে আছে এস এইছ এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবির এবং জাওয়াদ উদ্দিন আরবাব। আরও জানা গেছে, জিকে শামীমের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত চট্টগ্রাম ১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মন্টু এই রিসোর্টটির মূল উদ্যোক্তা। রিসোর্টটির চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টু আলোচিত যুবলীগ নেতা জিকে শামীমের শেয়ারের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন রিসোর্টটিতে। তবে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টটিতে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ২শ কোটি টাকা। রিসোর্টটির সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট রিসোর্টটির রাইড এমিজম্যান পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার ওয়াটার রাইড ও গেম জোন স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন করেন চায়না, ভারত ও দেশের বুয়েটের পরামর্শক দল। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্যাংককের বিদেশী প্রকৌশলীরা রিসোর্টের ডিজাইন করছেন। মূল কাজের দায়িত্বে আছে বুয়েট। ২টি পার্টে রিসোর্টটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৫ তারকা বিশিষ্ট রিসোর্টটি তৈরি হলে ২৫০ জন পর্যটকের আবাস হবে এখানে। ৫ থেকে ৬টি আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট থাকবে এর ভিতরে। নির্মাণ করা হবে উন্নত বিশ্বের আধুনিক মানের সুইমিং পুল। থাকবে জিম ক্লাব, থাকবে ৬টি গলফ ক্লাব। আগামী ২২ সালের ১ জানুয়ারি এই রিসোর্ট উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। বরিশালেও প্রভাব স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, বিগত দশ বছরে বরিশাল গণপূর্ত অধিদফতর থেকে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জিকে শামীমের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে। বরিশালে বিভিন্ন সময় দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলীদের জিকে শামীমকে ফোনে ধরিয়ে দিয়ে কিংবা প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপিপন্থী এক প্রভাবশালী নেতার খান বিল্ডার্সের লাইসেন্সের সাথে জিকে বিল্ডার্সের জেভি করে এবং শুধু খান বিল্ডার্সের নামে ৫০০ কোটি টাকার উপরে কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন জিকে শামীমের প্রতিনিধি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি কাজ পেতে একেক সময় অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কিংবা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবহার করেছেন। এমনকি প্রধান নির্বাহীর রুমে ক্যাডার নিয়ে প্রবেশ করে সাধারণ ঠিকাদারের ওপর হামলারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক সাধারণ ঠিকাদাররা বলেন, জিকে বিল্ডার্স, খান বিল্ডার্স, মের্সাস পলি ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজ নিলেই জানা যাবে গত দশ বছরে গণপূর্ত বিভাগ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা কত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদাররা আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান করলেই ভয়াভহ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে।
×