ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিপদসীমার কাছাকাছি উত্তাল পদ্মা

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজশাহীতে বিপদসীমার কাছাকাছি উত্তাল পদ্মা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে মধ্য আশ্বিনে এসে ফুলেফেঁপে উঠেছে রাজশাহীর পদ্মানদী। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার কাছাকাছি উঠে এসেছে পানির প্রবাহ। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সর্বশেষ বুধবার বেলা ১২টায় পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার মাত্র ৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। এদিন রাজশাহী অংশে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৪ মিটার উচ্চতায়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মার পানি প্রবাহিত হয় ১৭ দশমিক ৬১ মিটার উচ্চতায়। তার আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয় ১৭ দশমিক ৫১ মিটার। বর্তমানে বিপদসীমার ছুঁই-ছুঁই করছে পদ্মা। মাত্র ৮৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে রাজশাহীতে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা। এদিকে পানি বাড়ার কারণে নদী তীরবর্তী রাজশাহীর পবা উপজেলার নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে সেখানকার অর্ধশতাধিক পরিবার দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের খোলাবোনা, পুরাতন কসবা ও বেলুয়ার চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই প্রায় ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বাড়ছে। এতে নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। বিশেষ করে তীরবর্তী মানুষগুলো এই আশ্বিনে ভাঙ্গনের শঙ্কা করছেন। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক জানান, সর্বশেষ বুধবার বেলা ১২টায় রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৬৪ মিটার। তাই পদ্মায় পানির বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও এ বছরে এটাই সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৯ মিটার। এর পর থেকেই পানি আবার কমতে থাকে। এনামুল হক আরও বলেন, গত ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দুই বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর পানি বাড়লেও আর এই রেকর্ড ভাঙ্গেনি বলেও উল্লেখ করেন পাউবোর এই গেজ রিডার। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, বর্তমানে পদ্মায় পানির যে প্রবাহ, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে পানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। পুরো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মার পানি কখনও বাড়বে আবার কখনও কমবে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা এখনও কম। তিনি বলেন, রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর শহররক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তা ছাড়া মহানগরীর পশ্চিমাংশে বুলনপুর থেকে পবার সোনাইকান্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বাঁধ সংরক্ষণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই পদ্মার পানি বাড়লেও বাঁধ নিয়ে মহানগরবাসীর এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করে নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আকস্মিক নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। সম্প্রতি কয়েক দফার বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবারও বন্যা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তারা। অনেকে সর্বস্ব বিক্রি করে লাভের আশায় শীতের আগাম সবজি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে চরাঞ্চলে পানি ঢুকে শীতের আগাম সবজি ক্ষেত তলিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা। নীলফামারীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাশাপাশি নিম্নাঞ্চল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ প্লাবিত হয়েছে। এদিকে আশ্বিনের এই বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। আতঙ্কের বৃষ্টি ঘুম কেড়েছে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা শিল্পীদের। বৃষ্টির ভ্রƒকুটিতে সূর্যের দেখা নেই। প্রতিমার গায়ে রং তুলির প্রথম আঁচড় দিতে পারলেও দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত আঁচড় নিয়ে তারা চিন্তিত। পলিথিন দিয়ে ঢাকতে হচ্ছে প্রতিমার কাঠামো। বুধবার ভোর ৫টা থেকে টানা চার ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এর আগের দিনও মঙ্গলবার দিনভর থেমে থেমে কখনও হাল্কা আবার কখনও ভারি বৃষ্টি হতে থাকে। গত সোমবারও ছিল মেঘ বৃষ্টি। কিন্তু বুধবারে টানা চার ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাত হবার পর দিনভর চলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সূর্যের দেখা নেই তিন দিন থেকে। বুধবারের টানা চার ঘণ্টায় নীলফামারী ডালিয়া পয়েন্টে ১২২, জেলা সদরে ১৩০, ডিমলা উপজেলায় ১২৫, ডোমার, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ১০০ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে তিস্তা, চারালকাটা, দেওনাই, বুড়িতিস্তা, বুড়িখোড়া, নাউতারা, চিকলীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। এছাড়া ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের সওদাগড়পাড়া, মাস্টার পাড়া, বেলালের মোড় এলাকায় বসতবাড়িতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এই বৃষ্টিপাতে আমন ক্ষেতের উপকার হলেও ক্ষতি হয়েছে আগাম আলু, মরিচ, বেগুন, পটল করসহ উঠতি শাক ও সবজি ক্ষেতের। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের জানায়, তিস্তা নদীর পানি সকাল থেকে ৫২ দশমিক ৩৫ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
×