ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাবপাড়ায় নানা অনাচারের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ক্লাবপাড়ায় নানা অনাচারের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মীদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্লাবপাড়ায় জমজমাট ক্যাসিনো ব্যবসাসহ সামাজিক নানা অনাচারের বিরুদ্ধে এবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সংস্কৃতি কর্মীরা। এসব অনাচারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের মুখোশ উন্মোচনের আহ্বান জানিয়ে তারা বললেন, বিগত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে তাতে দেশের মানুষ বিস্মিত। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা অনাচার প্রতিদিন ঘটছেÑসেটা সকলেই জানে। কিন্তু সেই আনাচার যে এত ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে গেছে তা আমাদের জানা ছিল না। জানা ছিল না খেলার ক্লাবে আসলে ক্যাসিনো চলছে। রাজনীতিবিদদের কাছে না থেকে ব্যবসায়ীসহ অনেক অসৎদের হাতে চলে গেছে রাজনীতি। তারা নানাভাবে অনাচারে লিপ্ত। আমরা এই অভিযানকে সাধুবাদ জানাই। ঠিক একইভাবে এটাও জানতে চাই, কে কে কারা কারা কিভাবে এই সকল আনাচার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অনাচারকারী কিভাবে দলে, গোষ্ঠীতে কিংবা ক্ষমতায় আসল। এদের প্রতেক্যের মুখোশ উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, সব কাজে প্রধানমন্ত্রীকেই কেন পদক্ষেপ নিতে হয়। তাহলে এতসব ডিপার্টমেন্ট ও কর্মকর্তারা কি করে? তাদের চোখে কেন এসব আগেই ধরা পড়ে না। সামাজিক অনাচার, নৈরাজ্য, মাদক, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার-সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অভিযান রচনায় দেশব্যাপী সংস্কৃতিকর্মীদের সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে এই সমাবেশের মূল আয়োজনটি হয় সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে। যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, পথনাটক পরিষদ, চারুশিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও পিপলস থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, থিয়েটার ডিরেক্টরস ইউনিটির আহ্বায়ক অনন্ত হিরা, চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি কামাল পাশা চৌধুরী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পদক কামাল বায়েজীদ, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, মোহাম্মদ বারী, আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। রামেন্দু মজুমদার বলেন, ঢাকা শহরের খেলার ক্লাবগুলোও ক্যাসিনোর দখলে চলে গেছে। জুয়ার আসরে পরিণত হয়েছে। যুব সমাজের জন্য এটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। চলমান অভিযান নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষ এই দুর্নীতিবাদ, জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছে, সংস্কৃতিকর্মীরা সোচ্চার আছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অভিযান যেন অব্যাহত থাকে। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, হাঁটে, মাঠে ঘাটে যেখানে যাই সেখানেই গেলে দেখা যায় মাদক। দুর্নীতি, আনাচার চলছে আমরা জানতাম। কিন্তু এর মহাউৎসব চলছে তা আমাদের জানা ছিল না। এভাবে একটি সমাজ চলতে পারে না। দায়িত্ব ছিল আমাদের সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সবাই ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছি। চূড়ান্ত এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যে অভিযান তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা এই অভিযানের সঙ্গে আছি। আমরা অবাক হই যখন খেলার ক্লাবে ক্যাসিনো দেখি। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, এভাবে সমাজে অনাচারের স্তুপ তৈরি হবে আর সং¯ৃ‹তি কর্মীরা অনাচারের আবর্জনা পরিষ্কার করেই যাবে এটা হতে পারে না। সবক্ষেত্রেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাহলে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিবিদরা কি করেন? আমরা সংস্কৃতি কর্মীরা এই ধরনের অভিযানকে সাধুবাদ জানাই। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ঢাকা শহরে ৬০টিরও বেশি ক্যাসিনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে, এটা আমাদের জানা ছিল না। এই অভিযান আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই অভিযানের মধ্য দিয়ে সন্ত্রসীরা ঘা ঢাকা দিয়েছে। আরও যারা নেপথ্যে থেকে এ ধরনের আনাচার, অসামাজিক কার্যকলাপকে সহযোগিতা করছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
×