ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে চিংড়ি ঘেরে মড়ক ॥ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাগেরহাটে চিংড়ি ঘেরে মড়ক ॥ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি ঘেরে ভয়াবহ মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার মাছ মরে যাচ্ছে। চিংড়ি চাষীরা হাপিত্যেশ করছেন। রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রায় ২১ হাজার ঘেরের ৫০ শতাংশের অধিক ঘেরের গলদা চিংড়ি মরছে। দীর্ঘ তাপদাহের পর হঠাৎ বৃষ্টিতে ঘেরের পানিতে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় চিংড়ি ও সাদামাছের ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, একদিনেই ফলতিতা মৎস্য আড়তে মরে যাওয়া চিংড়ি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার। স্বাভাবিক বাজার থাকলে এ মাছ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হতো বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এছাড়া মাছের রং লাল হয়ে যাওয়ায় অনেকে মাছ ফেলে দিয়েছেন। এতে ওই অঞ্চলের চাষীদের ৩০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন শুধু ফকিরহাট উপজেলা নয় বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনার রুপসা উপজেলার চিংড়ি ঘেরেরও মাছ মারা গেছে অক্সিজেন কমে যাওয়ায়। একমাত্র আয়-উপার্জনের মাধ্যম চিংড়ি চাষ। হঠাৎ বৃষ্টিতে ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিংড়ি মারা যাওয়ায় সহায় সম্বলটুকু হারিয়ে আশির উর্ধ দম্পতি পুতুল রানী ও খগেন্দ্র রায় নির্বাক হয়ে বসে আছেন চিংড়ি ঘেরের পাড়ে। ৪ বিঘা জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ করে জীবন চালাতাম। হঠাৎ মাছ মারা যাওয়ায় আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই টাকার বেশিরভাগই ব্যাংক লোনের টাকা। বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে এ টাকা শোধ করব তা জানি না বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই দম্পতি। শুধু এই দম্পতি নয় বাগেরহাটের ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাটের হাজার হাজার চিংড়ি চাষী তাদের সহায়সম্বল হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ চাষী এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মড়কের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফকিরহাটের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিত শীল বলেন, ঘেরে পানি কম থাকায় এবং হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় ঘেরের পানির অক্সিজেন কমে গিয়ে ফকিরহাট উপজেলার রেজিস্ট্রেশনকৃত ৮ হাজার ঘেরের প্রায় ৭০ শতাংশ ঘেরের চিংড়ি মাছ মরে গেছে। এছাড়াও বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনার রুপসা উপজেলার চিংড়ি ঘেরেরও মাছ মারা গেছে অক্সিজেন কমে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে পুকুরে অক্সিজেন বাড়াতে ট্যাবলেট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চাষীদের আতঙ্কিত না হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকলকে মাঠে থেকে চাষীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
×