ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খেয়েই কোটিপতি নারী

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খেয়েই কোটিপতি নারী

মানুষ সাধারণত টাকা রোজগার করে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু এর উল্টোটা কি কখনও শুনেছেন? কারও কারও কিন্তু খেয়েই বরং রোজগার হয়। অর্থাৎ পেশাই খাওয়া-দাওয়া। বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? বিশ্বাস হোক বা নাই হোক, এই অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন বেথানি গাসকিন নামের এক মার্কিন তরুণী। খাওয়ার ভিডিও বানিয়ে ইউটিউব থেকে এক বছরেই আয় করে নিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা কিনা প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, তার ভিডিও দেখে খাওয়ার প্রতি পুনরায় উৎসাহী হয়ে উঠেছেন ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তরা। যারা কিনা দীর্ঘ চিকিৎসায় হারিয়ে ফেলেছিলেন খাওয়ার রুচি। কাজের ধরন যেমনই হোক না কেন তা মন থেকে ভালবেসে করতে পারলে সেই কাজের যে সফলতা আসে এটি যেন তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বেথানি গাসকিন ইউটিউবে পরিচিত ব্লভি নামে। তার ইউটিউব চ্যানেলটি ‘ব্লভিস লাইফ’এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৫ লাখের কাছাকাছি। তার বাইরে ভিউয়ার তো আরও রয়েছেই। স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে খাওয়ার ভিডিওগুলো তৈরি করেন তিনি। এটিই এখন তাদের পারিবারিক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত ইউটিউবের সামনে বসে একাই খান ব্লভি। কখনও মসলা মাখিয়ে ঝলসানো বিশাল বিশাল কাঁকড়া গোগ্রাসে খান, আবার কখনও খাচ্ছেন একগাদা চাওমিন। তবে অবশ্য, মাঝে মাঝে তাকে খাওয়ায় সঙ্গ দেন তার স্বামী।আর তা দেখে ইউটিউবের কোটি কোটি দর্শক। খোলসওয়ালা মাছ যেমন চিংড়ি, লবস্টার ইত্যাদি খাওয়ার ভিডিও বানিয়েই তিনি আজ সেলিব্রেটি। যদিও রান্নাবান্নায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তারপরও তার রেসিপি আর তার গাপুস গুপুস খাওয়া দাওয়ার ভিডিওগুলো কিন্তু তুমুল জনপ্রিয়। জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে খাওয়ার ভিডিও বানানো শুরু করেন গাসকিন। ঘরে নিজেই রেসিপি বানিয়ে সেসব খাওয়ার ভিডিও বানাতেন তিনি। সবশেষ তার তৈরি করা সি-ফুডের এক বিশাল ডিশ খাওয়ার ভিডিওটি দেখেছে এক কোটি ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, ‘ব্লভিস লাইফ’ এবং ‘ব্লভিস এসএমআর’ নামে দুই ইউটিউব চ্যানেল থেকে তিনি খাওয়ার ভিডিওগুলো প্রকাশ করে থাকেন। কাঁকড়া, গলদা চিংড়ি, লবস্টার ইত্যাদি খেতে খেতে তিনি নিজের অনুভূতিও শেয়ার করেন ভক্তদের সঙ্গে। আর সেই বিপুল পরিমাণ খাবার সামনে রেখে এবং খেতে খেতে তার নানা গল্প এবং অনুভূতি দেখতে ও শুনতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন খাদ্যরসিকরা। এই সেলিব্রিটি নারী বলেন, ‘আমি খেতে ভালবাসি আর রাঁধতে খুবই পছন্দ করি।’ গাসকিন জানান, শুরুতে শুধু রান্নার ভিডিও দিতেন তিনি। কিন্তু খাওয়ার ভিডিও প্রচার করতে অনুরোধ করতে শুরু করেন ভক্তরা। সেই থেকে নিজের ভিডিও বানানো শুরু, আর তারপরই সেলিব্রেটি হয়ে ওঠা। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘গেল এক বছরে আমি আয় করেছি ১০ লাখ ডলারের কিছু বেশি অর্থ। তবে এটি শুধু ইউটিউব থেকেই। বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। আসলে ভালবেসে যে কোন কাজ করলে তার সাফল্য আসবেই’ এসব ভিডিও অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়াকে উৎসাহিত করছে কি-না, এমনটা জানতে চাইলে বেথানি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এসব ভিডিও মজার। আর মানুষ এগুলো থেকে উপকৃতই হয়।’ কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব ভিডিও মানুষের উদ্বেগ কিছু সময়ের জন্য কমায়। একাকিত্ব দূর করতেও এটা কাজে লাগছে।’ বেথানি বলেন, ‘ ক্যান্সারে আক্রান্ত এমন মানুষের কাছ থেকে অসংখ্য মেইল পেয়েছেন তিনি। খাওয়ার প্রতি তাদের আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে পারছি আমি। এ ব্যাপারটা বড় প্রশান্তি জোগায় মনে।’ ইন্টারনেটে এই খাওয়ার বিষয়টিকে ‘মুকব্যাং’ বলা হয়। একজন লোক ক্যামেরার সামনে বসেন, আর তার সামনে রাখা থাকে প্রচুর খাবার। লোকটির কাজ একা সেই বিপুল পরিমাণ খাবার খেয়ে শেষ করা। এই দৃশ্য অনলাইনে দেখে লাখ লাখ মানুষ। একদিকে মানুষ পায় বিনোদন, আর অন্যদিকে খাদক এ থেকে করেন অর্থ উপার্জন। মূলত, এর প্রথম প্রচলন শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়াতে। মুকব্যাং নামটিও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে। কোরিয়ান ভাষায় মুক মানে খাওয়া, আর ব্যাংসং মানে সম্প্রচার। দুইয়ে মিলে তৈরি হয়েছে এই মুকব্যাং শব্দটি।
×