ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা, ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা, ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর ॥ আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচন। তবে এ নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা না থাকলেও বসে নেই প্রার্থীরা। প্রায় সকল প্রার্থীই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কোথাও পথসভা, কোথাও উঠান বৈঠক করছেন। ভোটারদের মন গলাতে নানা প্রকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। রংপুরের এ আসনটি প্রয়াত জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের। এরশাদের মৃত্যুর পরও তার জনপ্রিয়তা খুব একটা কমেনি। সেটাকে পুঁজি করেই নির্বাচনে জেতার আশায় এরশাদ পুত্র সাদ এবং ভাতিজা আসিফ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। মহানগর জাপার সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং মনোনয়ন বঞ্চিত মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীরসহ একটি অংশ মাঠে না নামলেও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সাদ এরশাদকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে তার পাল্লা ভারী হতে চলেছে। এদিকে ৫ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সপ্তমীর দিন হওয়ায় হিন্দু ভোটাররা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারে শোনা যাচ্ছে। তারা ভোট দানে বিরত থাকলে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাদ এরশাদ।রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হলেও তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই এবং জাতীয় পার্টি মহাজোটের একটি অংশ সেক্ষেত্রে আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ সাদ এরশাদের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে জেলা আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ বিষয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সাদ এরশাদের পক্ষে কাজ করা বা না করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। রংপুর মহানগর জাপা সভাপতি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ মহানগর জাপার অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন পর্যন্ত সাদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেননি। সিটি মেয়র মোস্তফা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দিলে তিনি কাজ করবেন না। তিনি বলেন, আমি আমার অবস্থানে অনড় আছি। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষেও নেই, বিপক্ষেও নেই। আমার অবস্থান নিরপেক্ষ। কর্মীদের প্রতিও আমার কোন নির্দেশনা নেই। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ বলেন, আসিফ আমার ভাই। তিনি নির্বাচন করতেই পারেন। রংপুরের লোকজনের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। আমি ভোটারদের ভালবাসায় মুগ্ধ। নগরীর লোহাপট্টি, সুপার মার্কেট, সদর উপজেলা চন্দন পাট ইউনিয়ন, শ্যামপুর, সিলিমপুর, ভুরার ঘাট এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমার বাবা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রংপুরবাসী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকেই নির্বাচিত করবে বলে আশা করছি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, লাঙ্গলের প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। এদিকে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আসিফ শাহরিয়ার দাবি করছেন, জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ তাকে সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে অপর প্রার্থীদের চেয়ে নিজেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন তিনি। আসিফ বলেন, এরশাদ পরিবারের সন্তান হিসেবেই আমার পরিচয়। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। এবারের নির্বাচন হচ্ছে রংপুরে উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্বাচন। স্থানীয় এমপির কাছে মানুষের অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে। সাদ বা রিটা রহমান যেই হোক। তারা বহিরাগত। বহিরাগতরা নির্বাচনের পর ঢাকায় থাকবেন। আমি এলাকাতেই থাকব। শুধু জাতীয় পার্টিরই নয়, আমি আওয়ামী লীগের ভোটও পাব। বিএনপির যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তাদের বিক্ষুব্ধ একটি অংশের ভোটও আমি পাব। এরশাদের উত্তরসূরি এবং স্থানীয় প্রার্থী এ দুটি ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তিনি ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। গত সংসদ নির্বাচনে এরশাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এই আসনে ৫৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন ২০ দলীয় জোটের রিটা রহমান। এবারও তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তার পক্ষে বিএনপির গুটি কয়েক নেতাকে মাঠে দেখা গেলেও প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা তার পাশে নেই। জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতাকর্মীকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতসহ বিএনপির প্রভাবশালী বড় অংশটি রিটা রহমানের পাশে থাকবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এদিকে বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমানের পক্ষে এতদিন প্রচারে অংশ না নিলেও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এরপরও কেন্দ্রীয় নেতারা শীঘ্রই রংপুরে আসবেন। তারা এলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে রংপুর বিএনপি এক হয়ে কাজ করবে। অতীতের ভোটগ্রহণে অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভোট অবাধ ও স্বচ্ছ হলে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবে। নগরীর শালবন এলাকার ভোটার হারুসহ অনেকে জানান, স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে যিনি যোগ্য তাকেই ভোট দেবেন।
×