ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে নিজের বাড়ি ৮৫.৮২ শতাংশ পরিবারের

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সারাদেশে নিজের বাড়ি ৮৫.৮২ শতাংশ পরিবারের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট বাড়ির মধ্যে ৮৫ দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবারের নিজের বাড়ি আছে। ভাড়া বাড়িতে থাকেন ১২ দশমিক ২১ শতাংশ পরিবার ও ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে থাকেন ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্যভাবে বাড়িতে থাকেন এক লাখ পরিবার। সব মিলিয়ে জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান এখন ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সম্প্রতি এমন তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে। জরিপে উঠে এসেছে তুলনমূলক বড় বাসা থেকে ছোট বাসার ভাড়া বেশির বিষয়টিও। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে ‘সার্ভে অন ওকুপোইড রেসিডেন্সিয়াল হাউসেজ এ্যান্ড রিয়েল এস্টেট সার্ভেস ২০১৮’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কুমার দাস এবং সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন। সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার পরিসংখ্যান ব্যুরো। সরকারের নীতি নির্ধারণে সঠিক তথ্য এবং উপাত্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে বিবিএসের কর্মীরা। বিকাশ কিশোর দাস বলেন, এ প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে বাসার আকার যত বড় ভাড়া তুলনামূলক তত কম। এছাড়া ছোট বাসার ভাড়া গুনতে হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে বস্তিতে যারা থাকছেন তাদের আবাসিক সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি। যে পরিবেশে বাস করুক না কেন মানুষের আয়ের ৫০ ভাগই যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া দিতেই। অন্যদিকে যারা বাড়ির মালিক তারা যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেন সে পরিমাণ লাভ পাচ্ছেন না। বিবিএসের মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, ছোট বাসায় ভাড়া বেশির তথ্যটি উঠে এসেছে আমাদের জরিপে। শুধু তাই নয়, বড় বাড়ির তুলনামূলক ভাড়া কম। এছাড়া এখনও ভাড়া বাসার চেয়ে নিজের বসত বাড়ির সংখ্যাই বেশি সেটিও জানা গেছে। ফুটপাথে যারা থাকে তাদের বসতবাড়ির আওতায় আনতে হবে। সামনের দিনে এ ধরনের জরিপ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানান কৃষ্ণা গায়েন। সংখ্যার হিসেব দিয়ে জরিপে বলা হয়, সারাদেশে নিজের বাড়ি আছে এমন সংখ্যা ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার পরিবারের। ভাড়া বাড়িতে থাকেন ৪৬ লাখ ২০ হাজার, ভাড়া ছাড়াই বাড়িতে বসবাস করেন সাড়ে ৬ লাখ পরিবার। দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা নিয়ে জরিপ থেকে তৈরি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার (পাঁচ তলার উপরে)। পাঁচ তলার নিচে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার। সেমি পাকা এক কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার। কাঁচা ২ কোটি ৯ হাজার এবং ঝুপড়ি ২ লাখ ৫০ হাজার। বসবাসের ঘরের গড় আয়তন ৪২৫ বর্গফুট। আবাসন খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভাড়া বাবদ আয় ছিল ৮১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। যা পরের অর্থবছর বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এক বছরে এক হাতে মূল্য সংযোজন ৭০ হাজার ২০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজার মূল্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। অনাবাসিক ভবনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে যা পরের বছর দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সংস্কার ব্যয় বাদে এক হাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। ১১ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়ে পরের অর্থবছরে এর আকার দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকায়। আবাসন খাতে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৫ জন কাজে নিয়োজিত আছেন। শ্রমিকদের ৩১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বেতন হিসাবে ও ৫৩৪ কোটি টাকা অন্যান্য পাওনা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। দেশে মোট ৫৩ লাখ ২০ হাজার বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে, এসব ভবনে ৩১ দশমিক ২১ ভাগ মালিক নিজেই ব্যবহার করে থাকেন। পজিশন বিক্রি ২ দশমিক ১২ শতাংশ ভবনে। আর ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভবন। এদিকে, দেশে নির্মাণ খাতে ৩ হাজার ১৩২ প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। যার ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ রিহ্যাব ও ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) সদস্য। নির্মাণ খাতে মোট এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯২ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। একহাতে মোট উৎপাদন ২০১৫ -১৬ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা, যা পরের বছর দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। একই সময়ে মূল্যসংযোজন ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা থেকে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকায়। আবাসিক, বাণিজ্যিক ও নির্মাণ মিলিয়ে ৩ উপখাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৪১ হাজার ৫৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক বছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
×