ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারী সদর হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন নিয়ে তোলপাড়

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নীলফামারী সদর হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন নিয়ে তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ একমি কোম্পানির সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাট স্যালাই রোগীর চিকিৎসায় সরবরাহ করার ঘটনায় রোগীর এলাকার মানুষজন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। রবিবার বেলা ১২টার দিকে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে তারা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। এ সময় সিভিল সার্জন ও পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা এক ঘণ্টা পর এলাকা ত্যাগ করে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্তটিম গঠন করা হয়েছে। নীলফামারী শহরের কলোনি মহল্লার আব্দুল ওয়াবের স্ত্রী মল্লিকা বেগম (৫৫) গ্যাস্ট্রিক ও বুকের ব্যথা নিয়ে শনিবার রাত ১০টায় হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। জরুরী বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে ওই রোগীকে ওয়ার্ডের সেবিকা রোগীর শরীরে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাট স্যালাই পুশ করে। রোগী মল্লিকা বেগমের ছেলে মোঃ সানোয়ার হোসেন (৩৪) অভিযোগ করে জানায় স্যালাই চলাকালে দেখতে পাই আমার মাকে ১০১১৭০০৬ ব্যাচ নম্বরের ২০১৭ সালের মে মাসে উৎপাদিত ও ২০১৯ সালের মে মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাট স্যালাই পুশ করা হয়েছে। যা মায়ের শরীরে প্রবেশ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়ার্ডের নার্সদের ডেকে এসে মায়ের শরীর থেকে স্যালাই আউট করে দেয়া হয়। খবর পেয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারসহ অন্যান্য ডাক্তাররা ছুটে আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রাতেই রোগীর লোকজন এসে হাসপাতালে উত্তেজনা সৃষ্টি করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর রবিবার দুপুর ১২টার দিকে রোগীর লোকজন এসে সিভিল সার্জন কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করতে থাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রুহুল আমিন, সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলামসহ পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিৎ কুমার বর্মণ এমন ঘটায় দুঃখ প্রকাশ কররে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে ওই রোগীর প্রয়োজনী চিকিৎসা প্রদান করেছে। তবে ওই মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইনে রোগীর শারীরিক কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি যে রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন তার সুচিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রেজাউল করিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডোমারে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু থানায় মামলা ॥ নীলফামারীর ডোমার উপজেলা শহরের সেভেন স্টার নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় এক নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার ডোমার থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহত রোগীর স্বামী রবিউল ইসলাম। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে দুপুরে জেলার মর্গে ময়নাতদন্ত করেছে। এ ঘটনায় ওই ক্লিনিকের সকল লোকজন ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, জেলার জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত মুছা শেখের ছেলে রবিউল ইসলাম তার সন্তান সম্ভবনা স্ত্রী মেঘলা আকতারের (২০) প্রসব ব্যথা উঠলে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডোমার উপজেলা শহরের ডাঃ আইনুল ইসলামের মালিকাধীন সেভেল স্টার ক্লিনিকে ভর্তি করে। ডাঃ আইনুল ইসলাম ক্লিনিকে উপস্থিত না থাকায় তার সহকারী রঞ্জিত রায় রোগিণীকে জরুরী সিজারের জন্য অপারেশন রুমে নেয়। মোবাইলে ডাঃ আইনুল হকের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তারের সহযোগী রঞ্জিত, নিহার রঞ্জন রায় ও জাহিদ সিজার করে। সিজারে ওই নারী একটি মেয়ে সন্তান হয়। এরপর রোগীকে ক্লিনিকের ৩ নম্বর বিছানায় রাখে। এর কিছুক্ষণ পর ওই নারীর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তারা রক্তক্ষরণের চিকিৎসা না দিয়ে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে ক্লিনিক ছেড়ে চলে যায়। পরেরদিন শনিবার সকালে ১১টার দিকে ক্লিনিকের লোকজন রোগিণীকে পুনরায় অপারেশন রুমে নেয়। ক্লিনিকের লোকজন কোন কিছু করতে না পেরে একটি এ্যাম্বুলেস ডেকে এনে রোগিণীকে উঠিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এ্যাম্বুলেন্স ডোমার উপজেলা পরিষদের কাছে এলে রোগিণী গাড়িতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর ক্লিনিকের লোকজন নিহত রোগিণীর স্বামীসহ স্বজনদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে লাশ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে দাফনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ক্লিনিকের লোকজন পালিয়ে যায়। ডোমার থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান ঘটনাটি জানার পর পুলিশ ওই ক্লিনিকে অভিযান চালালে ঘটনাস্থলে দেখা যায় ক্লিনিকের লোকজন তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। রাতেই রাত উদ্ধার করে রবিবার জেলার মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। এ ঘটনায় ক্লিনিকের মালিকসহ ৪ জন ও অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে নিহত রোগিণীর স্বামী মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×