ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শামীম ও শফিকুলকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ

আরও বড় ক্যাসিনো স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল খালেদের

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আরও বড় ক্যাসিনো স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল খালেদের

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকায় আরও বড় ক্যাসিনো স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল খালেদসহ ক্যাসিনো সিন্ডিকেটের। এজন্য বিদেশের বড় বড় ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন তারা। সাধারণ পরিবারের সদস্য হয়েও রাজনৈতিক তকমা বাগিয়ে জুয়ার বড় আসর ক্যাসিনো চালিয়ে আর টেন্ডারবাজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন গ্রেফতারকৃত ঢাকা মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। ক্যাসিনো আর টেন্ডারবাজি করে শুধু কাড়ি কাড়ি টাকারই মালিক হননি, নিয়ন্ত্রণ করতেন আন্ডারওয়ার্ল্ড। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসারও অনেক কিছুই ছিল খালেদ মাহমুদের নখদর্পণে। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতে গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এসব ক্যাডারদের কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকার তথ্য মিলেছে। আগ্নেয়াস্ত্রগুলো কিভাবে, কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খালেদ মাহমুদ ছাড়াও র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা দাবি করা জি কে শামীম ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাব থেকে গ্রেফতারকৃত ক্লাবটির সভাপতি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জি কে শামীম ও শফিকুল আলম ফিরোজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুইটি করে চারটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ডিবি পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ভিক্টোরিয়া ক্লাবে নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ, রাজকুমার ও বিনোদ মানালীর মাধ্যমে ক্যাসিনো চালু হয়। পরবর্তীতে তারা ক্যাসিনো বিক্রি করে দিলে খালেদ ও তার সহযোগীরা ক্যাসিনো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের গড়ে তোলা সৈনিক ক্লাব, বনানী আহমেদ টাওয়ারের ২২ তলায় ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, ফুয়াং ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা, এজাক্স ক্লাব, উত্তরা ক্যাসিনো ও ইয়ংমেন্স ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল খালেদ ও সম্রাটের কাছে। ইয়ংমেন্স ক্লাবের সভাপতি হয়েই খালেদ আধুনিক ক্যাসিনো চালু করেন। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকায় আরও বড় ক্যাসিনো চালু করার পরিকল্পনা ছিল খালেদ ও তার সহযোগীদের। এজন্য তারা বিদেশে যোগাযোগ করছিল। এছাড়া খালেদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। অস্ত্রগুলো কারা তাদের সরবরাহ করেছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খালেদ সাধারণ পরিবারের সদস্য। দলীয় পরিচয়ে টেন্ডারবাজি আর ক্যাসিনো চালিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বর্তমানে এক শ’ কোটি টাকার একটি কাজ চলছে। শত শত কোটি টাকার মালিক তিনি। তবে কত শ’ কোটি টাকার মালিক তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এই কর্মকর্তা বলছেন, তার নিয়ন্ত্রণে ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, পুরানা পল্টন, বাসাবো, শাহজাহানপুর, বাসাবোসহ আশপাশের এলাকায় থাকা অন্তত ১০ থেকে ১২টি ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল খালেদ মাহমুদ ও তার সহযোগীদের হাতে। তিনি তার গড়ে তোলা নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে ক্লাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে সব ক্লাবে ক্যাসিনোর মতো জুয়া চলত না। ছোট ছোট ক্লাবগুলোতেও জুয়া চলত। সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ করত তারই লোকজন। দুই একটি বড় ক্লাবে শুধু ক্যাসিনো চালাত। ক্যাসিনো থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি বড় অংশ দুবাইতে পলাতক থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে দিত। দীর্ঘদিন জিসানকে টাকা দিলেও পরবর্তীতে দলীয় পদ পদবি পাওয়ার পর আর নিয়মিত টাকা দিত না। তবে মাঝে মধ্যে টাকা দিত।
×