ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল শিল্পে সফল উদ্যোক্তা...

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 মোবাইল শিল্পে সফল উদ্যোক্তা...

দেশে মোবাইল শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটেছে। কম দামে ভাল স্মার্ট ফোন পাওয়া যাচ্ছে। দশ হাজার টাকার মধ্যে সুদৃশ্য স্মার্ট ফোন কেনা যাচ্ছে। যা নানা রকম ফিচারে সমৃদ্ধ। অথচ কিছুদিন আগে এমনটা ভাবাও যেত না। ইতোমধ্যে স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, আইটেল, ট্রানসান, ফাইভস্টার মোবাইল হ্যান্ডসেট কারখানা স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। জানা যায়, আরও পাঁচটি কোম্পানি দেশে মোবাইল কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। দেশেই মোবাইল সংযোজিত হচ্ছে। ফলে মোবাইলে হ্যান্ড সেটের দাম কমে এসেছে। আমদানি নির্ভরতা কমেছে। ২০১৮ সালে স্থানীয়ভাবে সংযোজন হয়েছে ২৩ লাখ মোবাইল ফোনসেট। কম দামে ভাল মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনা সম্ভব হচ্ছে। যখন সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর ছিল তখনকার চেয়ে। দেশে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীরা মানের দিক থেকে সন্তুষ্ট। এ বিষয়ে একটি কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস অফিসের একজন অপারেশন ম্যানেজার জানিয়েছেন, দেশে তৈরি হ্যান্ডসেটে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। কমসংখ্যক মানুষই সেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা নিয়ে আসছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে মোবাইল কারখানাগুলোতে। আবার অদক্ষ শ্রমিকরা চাকরি খুঁজে পেয়েছে শ্রমনির্ভরখাতে। দক্ষ শ্রমিকরা বিদেশীদের কাছে ট্রেনিং নিয়ে আরও দক্ষ হয়ে উঠছে। অন্যদিকে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তিও বেড়েছে। মূলত কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিরলস প্রচেষ্টায় মোবাইল ব্যবসার এত প্রবৃদ্ধি। বিদেশীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, বাংলাদেশে মোবাইল ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হলে তাদেরই লাভ। যারা এ ব্যবসায় আজকের উন্নতির পেছনে কুশীলব ও প্রধান ভূমিকা পালন করছেন, তাদেরই একজন রুহুল আলম আল মাহবুব। ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক লিমিটেড। ফেয়ার গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি স্যামসাং মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনের অনুমোদিত প্রস্তুতকারক ও বিপণনকারী। রুহুল আমিন আল মাহবুব এক সময় নোকিয়ার পরিবেশক ছিলেন। নোকিয়ার বাজার যখন পড়ে যায়। তখন তিনি স্যামসাং এর পরিবেশক হয়ে দেশের আনাচে-কানাচে মোবাইল সেট বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা করেন। দূরদৃষ্টি আর সময়োপযোগী সিদ্বান্তের কারণে তিনি মোবাইল শিল্পে নিজেকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছেন। এক সময় তিনি ভাবলেন, আমদানি নির্ভরতা কাটাতে হবে। দেশেই মোবাইল তৈরির ফ্যাক্টরি করতে হবে। তিনি ফ্যাক্টরি করার জন্য লেগে থাকলেন। স্যামস্যাংয়ের মতো বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কারখানা করা চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না। কিন্তু অদম্য রুহুল আলম আল মাহবুব হাল ছাড়েননি। শত কোটি টাকা বিনিয়োগের ঝুঁকি তো ছিলই। তিনি স্যামসাং মাদারকে বোঝাতে সক্ষম হলেন। বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি স্থাপনে তাদেরই মুনফা বাড়বে। ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়বে। মানুষ কম দামে স্যামসাং মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে। ২০১৮ সালের মে মাসে ফেয়ার গ্রুপ নরসিংদীতে মোবাইল কারখানায় উৎপাদন শুরু করে। ৫৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই কারখানায় গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী স্মার্ট ফোন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশী কোম্পানি ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছে এই কারখানা। মোবাইল হ্যান্ডসেটের পাশাপাশি এখানে রেফ্রিজারেটর তৈরি হয়। এখানকার তৈরি ফ্রিজে লেখা থাকে মেড ইন বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে কারখানাটির কর্মযজ্ঞ, পরিবেশ, উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হন জাতীয় রাজস্ব বোডের্র (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এখানে সকল পণ্য উৎপাদিত হয়। উন্নত বিশ্বে যে সিস্টেমে পণ্যের মান যাচাই করা হয়। এখানেও সে সিস্টেম ব্যবহার করা হয় বলে জানা যায়। এজন্য কোরিয়ান দক্ষ জনবল এ দেশের লোকদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে স্যামসাংয়ের দক্ষ কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেছেন, স্যামসাং আমাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। আর আমরা অর্থায়ন করে কারখানাটি গড়ে তুলেছি। এ কারখানাতেই আমরা মেড ইন বাংলাদেশ লেখা স্যামসাং ফ্রিজ উৎপাদন করছি। যেগুলো আমাদের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভবিষ্যতে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা ফ্রিজ বিদেশেও আমরা রফতানি করব। প্রায় দুই হাজার মানুষ ফেয়ার গ্রুপে কর্মরত আছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট, টিভি, ফ্রিজের এ কারখানা গড়ে তুলেছেন নরসিংদিতে। বাংলাদেশের বাজারে নিত্যনতুন পণ্য সামগ্রী আনতে ফেয়ার গ্রুপ অগ্রহী ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাজারে এনেছে SAMSUNG Flip. SAMSUNG Flip একটি ইন্টারেক্টিভ ডিসপেন্ট যা কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং একটি সহজ কর্ম পরিবেশ তৈরি করে। বর্তমান কর্পোরেট যুগে মিটিং বা সভা একটি ব্যবসার জন্য অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ এবং স্যামসাং ফ্লিপ আপনার মিটিংয়ের আবশ্যকীয় উপাদানগুলোর একটি হতে পারে। শুধু ব্যবসা নয়। সামাজিক দায়িত্ব পালনে ফেয়ার গ্রুপ পিছিয়ে নেই। জানা গেল এই প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের কাজের সুযোগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমি মনে করি প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে। আমরা স্যামসাং ফ্যাক্টরিতে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ প্রদান করে থাকি। ফেয়ার গ্রুপ শুধু দেশে তৈরি ইলেকক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণই নয়। ফেয়ার ফুড এ্যান্ড লাইফস্টাইল বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড অলিটেলিয়া, পাস্তা জারা, টম গার্ডেন ইত্যাদি ভোগপণ্য বাজারজাকরণ করছে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার ক্যাফে চেইন ‘সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশ’ বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবারের স্বাদ ভোক্তাদের নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশ ফেয়ার গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশে খাবারের ভিন্নতা ও মানের কারণে ভোক্তাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে জানা যায়।
×