ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানীতে কমেছে

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানীতে  কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত দেশের আটটি জেলা ডেঙ্গু রোগীমুক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে রাজধানীর তুলনায় ঢাকার বাইরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ রয়ে গেছে। শনিবারও সারাদেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২২৫২ ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীতে নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর, বরিশাল ও কুষ্টিয়ায় একজন করে তিন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সরকারী হিসেবে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৬৮ হলেও বেসরকারী পরিসংখ্যানে তা দুই শতাধিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৪০৮ । এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ১৩৫ এবং ঢাকার বাইরে ২৭৩। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ২২৫২ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯১৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৩৩৫ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮৪৩৯৭ জন ও ৮১৯৪২ জন। সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৮ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১১৬ জনের মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৬৮ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ২৯৯ জন, চট্টগ্রামে বিভাগে ১৬৮ জন, খুলনা বিভাগে ৫০০ জন, রংপুর বিভাগে ৩৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০১ জন, বরিশালের ৬ জেলায় ১৮৭ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তামানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০৯ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৬৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০৩ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮০ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৫২ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে নতুন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৫ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। ফরিদপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাতে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন শেফালী (৭০) নামে এক বৃদ্ধা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। শেফালী মাগুরা সদরের কেচুয়াডুবি গ্রামের বাসিন্দা নিমাইর স্ত্রী। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ মামুন উর রশিদ বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মাগুরা থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন শেফালী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন শেফালী। চিকিৎসা শুরুর এক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান শেফালী। বরিশাল ॥ স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পারভিন বেগম (৩৬) নামের এক গৃহবধূ মারা গেছে। তিনি বানারীপাড়া উপজেলার তেঁতলা গ্রামের মোঃ ফাইজুল হকের স্ত্রী। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাহোসেন জানান, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পারভিন বেগমকে তার স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত শেবাচিমে মোট নয়জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তারেক (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তারেক দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকু-ি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের মহির উদ্দিনের ছেলে এবং খলিশাকুন্ডি কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তারেক শুক্রবার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সকালে তাকে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনালে হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তারেক মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি ছিল। শনিবার সকালে তাকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নেয়া হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২১ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ৭২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং এ যাবত চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ১০২ জন বলেও সিভিল সার্জন জানান। এনিয়ে কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিশু ও কলেজ ছাত্রসহ ৬ জনের মৃত্যু হলো। এদের মধ্যে ৩ জন দৌলতপুরের ও ৩ জন ভেড়ামারার।
×