ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেকর্ড ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ টন খাদ্য মজুদ

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  রেকর্ড ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ টন খাদ্য মজুদ

তপন বিশ্বাস ॥ দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে উঠেছে। আগের রেকর্ডের চেয়ে তিন মেট্রিক টনেরও বেশি। চাল ও গম মিলে সরকারের খাদ্যগুদামে বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন। যা খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারকে আরও স্বস্তিজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় অঙ্গীকার। তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব মিলিয়ে বর্তমানে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬৮৮ মেট্রিক টন । এর মধ্যে গুদামে চাল রয়েছে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন। আর গম মজুদের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন। খাদ্য মজুদের এই পরিমাণ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ মজুদ ছিল ১৬ লাখ ৯ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন। প্রত্যেকটি গুদাম প্রায় পূর্ণ। আগের তুলনায় এখন মজুদ প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন বেশি। ২০১৫ সালের এই মজুদ ছিল তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। এই রেকর্ড ভেঙ্গে মজুদে এবার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, দেশে খাদ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মজুদ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য নিয়ে দেশে কোন কারসাজি করার সুযোগ দেয়া হবে না। এ লক্ষে আমরা পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে চাই। এবার বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ধান চাল মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ মেট্রিক টন। বিগত ১ মে থেকে শুরু হয় বোরো সংগ্রহ অভিযান। এবার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ধান চাল মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সিদ্ধ চাল সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন এবং ধান ৪ লাখ মেট্রিক টন। প্রথমে ২ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা বৃদ্ধি করে আরও ২ লাখ টন কেনার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৬ টাকা এবং প্রতি কেজি ধান সংগ্রহ মূল্য ২৬ টাকা র্নিধারণ করা হয়। ১ মে থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু করে সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এতে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এছাড়া আরও কিছু গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ধারণ ক্ষমতা আরও এক লাখ মেট্রিক টন বাড়বে। সে ক্ষেত্রে দেশে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২১ লাখ মেট্রিক টনে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সরু চালের বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৪৫ টাকা থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি চাল কেজি প্রতি ৩৪ টাকা থেকে ৩৮ টাকা এবং মোট চাল ৩১ থেকে ৩৩ টাকা। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। দেশে রেকর্ড পরিমাণ মজুদ থাকায় চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও রয়েছে নীরব। সরকারের হাতে মজুদ কমে গেলে এরা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। কিন্তু সরকারের হাতে মজুদ বেড়ে যাওয়ায় এরা কোন কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য বাজার স্থিতিশীল থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের জন্য মঙ্গল। ২০১৭ সালের সরকারের খাদ্য মজুদ তলানিতে এসে পৌঁছায়। তখন সরকারের মজুদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এই পরিস্থিতিতে দেশের চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। রাতারাতি চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারও বিব্রত হয়ে পড়ে। মজুদ কমে যাওয়ায় বাজার কিছুটা হলেও এই সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। তখন দ্রুত চাল আমদানি করে সরকার বাজার স্থিতিশীল করে। এই পরিস্থিতি যাতে আর না আসে এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চালের পাশাপাশি এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে চাল ক্রয় করছে সরকার। সূত্র জানায়, চালের বাজার স্থিতিশীল থাকায় খোলাবাজারে চাল বিক্রির কর্মসূচী (ওএমএস) আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে খোলাবাজারে আটা বিক্রি চলছে। সোমবার সারাদেশে মোট ৭৭১ মেট্রিক টন আটা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সারাদেশে দেয়া হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে সারাদেশে মোট ২১ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন আটা বিক্রি করা হয়েছে।
×