ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব নেতাদের জোরালো সমর্থন চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ

এম শাহজাহান, নিউইয়র্ক থেকে ॥ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের জোরালো সমর্থন চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতেই হবে। এ ইস্যুতে চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ইতোমধ্যে নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। আজ রবিবার বিকেলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ও জাতিসংঘের অধিবেশন ঘিরে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রিয় নেত্রীর সফর সফল করতে প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভা সেমিনার ও আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এবার সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। এ কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নেতা এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। ঢাকা থেকে নয় পত্রিকা, টিভি, রেডিও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদকর্মীরা অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নিউইয়র্কে আসছেন। গত ১৭ আগস্ট সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশন শুরু হয়, চলবে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন এ অধিবেশনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নাইজিরিয়ার তিজানি মোহাম্মদ বান্দে। তিনি এ সময় জাতিসংঘের প্রথা অনুসারে সংস্থার সাধারণ পরিষদ ভবনের ঘণ্টা বাজিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেন। তথ্য মতে, এবার জাতিসংঘে সদস্য ১৯৩ দেশের সরকার প্রধানরা অধিবেশনে যোগ দেবেন। ৭৪তম সাধারণ পরিষদের প্রথম প্রাক-পরিকল্পনাকারী বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই অধিবেশনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট তিজানি বান্দের হাতে এই অধিবেশন পরিচালনার কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তুলে দেয় জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও সাধারণ পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ। জাতিসংঘ মহাসচিব সাম্প্রতিক বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে প্রেসিডেন্ট তিজানি বান্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর মধ্যে মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা চরমপন্থী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নত শিক্ষা, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব, শিশু শিক্ষা, অপুষ্টিহীনতা দূরীকরণসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিগুলোর মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ও বৈষম্য বাড়ছে, যা একটি সংঘাতময় বৈশ্বিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে সবার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার বিকল্প নেই বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে যোগ দিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে উপস্থিত সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকেই আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছে, কিন্তু যে ধরনের পদক্ষেপ নিলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়, সেটি হচ্ছে না। এজন্য ওসব বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রকে পুশ করা দরকার। আমি চাই আপনারা যারা যুক্তরাষ্ট্রেও ভোটার, তারা আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি তথা সিনেটর-কংগ্রেসম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারকে বলবেন তারা যেন শক্তহাতে এর একটা বিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনসহ অন্য এলাকার আরও ৬ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তারাও জিম্মিদশায় আছেন। তাদের দুর্দশার কথা সভ্য সমাজকে জানাতে হবে, একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারীরা যাতে সসম্মানে নিজ বসতভিটায় ফিরতে পারে তেমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এজন্য বিশ্বজনমত জোরদারের জন্য এবারের অধিবেশনে আমরা একাধিক সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করব, বিশ্বজনমত শক্তিশালী করার জন্য যা যা করণীয় তা সবই করা হবে। ক্যাসিনো বন্ধে সরকারের উদ্যোগে খুুশি প্রবাসীরা ॥ ক্যাসিনোসহ সব ধরনের জুয়ার আসরে অভিযান চালানোয় সরকারের উদ্যোগে খুশি প্রবাসীরা। যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান প্রবাসী বাংলাদেশীরা। নিউইয়র্কেও প্রবাসী বাঙালীদের এখন মূল আলোচনা ঢাকার ক্যাসিনো। সরকারের এই উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করছেন তারা। নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার প্রতি প্রবাসীদের আস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সঠিক ছিলেন, এখনও আছেন। তার হাতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন। নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগঠন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোহাম্মদ বলেন, অপরাধীদের বিচার করছেন প্রধানমন্ত্রী। তার প্রতি প্রবাসীদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু বইমেলা-১৯ উদ্বোধন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ বইমেলা বসেছে জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ স্কুলে। মুজিববর্ষ উদযাপন পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতি দিন বেলা এগারোটায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত দশটা পর্যন্ত। মেলা উদ্বোধন করেন কথাশিল্পী আনিসুল হক। এ সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×