ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসমের শিলচরে ঢাকা পদাতিকের ‘কথা-৭১’

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অসমের শিলচরে ঢাকা পদাতিকের ‘কথা-৭১’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ দুই দেশের শিল্পীদের পারস্পরিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় ও জনগণের আত্মার ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে অসমের শিলচরে ২০ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ৪ দিনব্যাপী ‘ভারত-বাংলাদেশ নাট্য উৎসব ২০১৯’-এর আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, শিলচর, অসম। তাদের আমন্ত্রণে লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঢাকা পদাতিকের ২৪ সদস্যের মঞ্চ নাটকের একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। শিলচরের বঙ্গভবন মিলনায়তনে ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার উদ্বোধনী দিনে মুক্তিযুদ্ধের ডকু-ড্রামা ‘কথা-৭১’ নাটকের ৫৬তম প্রদর্শনী হয়। ‘কথা-৭১’ নাটকটি রচনা করেছেন কুমার প্রীতীশ বল। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। ঢাকা পদাতিকসহ উৎসবে দুই দেশের ৮টি মঞ্চ নাটকের দল অংশ নিচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৫-৪৫ মিনিটে শিলচরের বঙ্গভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছ ৪ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে ভারত সফররত ২৪ শিল্পী হলেনÑ মিজানুর রহমান, ফিরোজ হোসাইন, দেবাশীষ ঘোষ, মামুন-উর-রশীদ, শেখ শানে-মাওলা, বিজন কান্তি ধর, এইচএম মোতালেব, শরিফুল ইসলাম মামুন, কাজী ফরিদুল ইসলাম চপল, মোঃ ফরিদুল ইসলাম তালুকদার, সিফাত বিন আজিজ, আবুল হাসনাত, মোঃ আতিকুর রহমান, আবুল বাসার সোহেল, মোঃ কাজী সম্রাট, পরিমল রোজারিও, মোহাম্মাদ জাকারিয়া, মাহফুজা আক্তার মিরা, মারজিয়া জাবিন ত্বন্নী, বর্ণালী আহমেদ সেতু, সিরাজুম মুনিরা ইকরা ও মোঃ তারেক আলী। ‘কথা-৭১’ নাটকের মূলভাবনা গোলাম মোস্তফা, মঞ্চ মঞ্জুর আহমেদ, আবহসঙ্গীত সাইদুর রহমান লিপন, আলোক ঠা-ু রায়হান, প্রপস কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, পোশাক কাজী শিলা, ভিডিও গ্রাফি সাইদ কাজল, প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘নাইন মান্থস ফ্রিডম’, ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’, প্রদর্শনী ও পোস্টার অশোক কর্মকার, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, আলোক প্রক্ষেপণ মাসুদ আহমেদ, আবহসঙ্গীত প্রক্ষেপণ রিয়াজ আহমেদ, মঞ্চ সহযোগী আবুল হাসনাত, মঞ্চ উপকরণ ব্যবস্থাপক খন্দকার আতিকুর রহমান, মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, মঞ্চ অধিকর্তা এইচএম মোতালেব ও খন্দকার আতিকুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা তারেক আলী মিলন, প্রধান সমন্বয়কারী ফিরোজ হোসাইন, প্রযোজনা অধিকর্তা মিজানুর রহমান, সার্বিক তত্ত্বাবধানে গোলাম কুদ্দুছ। ‘কথা ৭১’ নাটকের মাধ্যমেই মুক্তিযোদ্ধারা বার বার ইতিহাসের সত্যের মুখোমুখি হন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই সত্য ইতিহাস যথার্থভাবে উপস্থাপন হয়নি বলেই তরুণদের একটি অংশ আজও বিভ্রান্ত, ‘কথা ৭১’ ইতিহাসের সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করারই একটি উদ্যোগ মাত্র। নাটকের গল্পে উঠে এসেছে একজন মুক্তিযোদ্ধা এখনও আত্ম যন্ত্রণায় ভুগছেন। কারণ যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে। ওই মুক্তিযোদ্ধা এ জন্য সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন দলের ব্যানারে কাজটি করেন না। একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামেন। তাঁর বিশ্বাস, এ কাজে অনেকেই অতঃপর এগিয়ে আসবে। এই মুক্তিযোদ্ধা একটি সফল সমাবেশ সম্পন্ন করে বাসায় ফিরে দেখেন তাঁর সন্তান ঘরে উচ্চ শব্দে ইংরেজী গান শুনছে। মুক্তিযোদ্ধা পিতা এ জন্য বিরক্ত বোধ করেন। তিনি গান বন্ধ করে দেন। এতে ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে পিতার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়। পিতা-পুত্রের এই বিতর্কের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বেরিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই অপারেশন সার্চ লাইট নিয়ে পাকিস্তানী আর্মিরা পর্যলোচনার মাধ্যমে গণহত্যার রূপরেখা চূড়ান্ত করে। এ সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বর্বর হামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। শুরু হয় গণহত্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সেই গণহত্যা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) অধ্যাপক নূরুউল্লা নিজের ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করার মধ্যমে ’৭১-এ গণহত্যার প্রামাণ্য দলিল তৈরি করেন। জগন্নাথ হলের নিহতের লাশ সরায় ডোমরা। এরই মধ্যে চুন্নু ডোম এবং পরদেশী ডোম কথা বলে ঢাকা শহরের নির্মম গণহত্যা নিয়ে। নাটকের ভেতরেই জানা যায়, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং মর্মান্তিক ধর্মান্তরের কথা। অধ্যাপক যতীন সরকারের স্ত্রী কানন সরকারের ধর্মান্তরের প্রতিবাদ করায় মাওলানা সাহেবকে মসজিদে খুন করে পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী। স্বাধীনতাবিরোধীদের শান্তি কমিটি রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন, তাদের এবং পাকিস্তানী আর্মিদের অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যায় দিশেহারা বাঙালী রুখে দাঁড়ায়। গঠিত হয়, মুক্তি বাহিনী, মুজিবনগর সরকার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পরিবেশিত অনুষ্ঠান সেদিনের বিধ্বস্ত বাঙালী জাতির মনে বিরাট আশার সঞ্চার করে।
×